শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

লাল ও হলুদ পেঁপের দেশীয় উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন

৫ বছরের গবেষণা

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

৫ বছরের গবেষণায় লাল ও হলুদ পেঁপের সুমিষ্ট ও উচ্চ ফলনশীল দেশিয় দু’টি জাত উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরএইউ) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের গবেষক অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী।
নাসরীন আক্তার আইভী জানান, ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হবে-এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পাঁচ বছর গবেষণার পর তিনি সুস্বাদু ফল ও সবজি পেঁপের এমন দেশিয় জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, পেঁপের জাত দুটি গাইনাডোইওসিয়াস ধরনের (স্ত্রী ও উভয়লিঙ্গ বিশিষ্ট) গাছ থাকবে। প্রতিটি গাছেই ফল ধরবে।
প্রতিটি গাছে ৫০-৬০টি ফল হয়। স্ত্রী গাছের ফলের আকার নাশপাতি আকারের এবং গায়ে লম্বালম্বি দাগ আছে। ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৬০-৭০টন। এ জাতের পেঁপেতে পেপেইন নিঃসরণ বেশি হয়। পাকা ফলের মিষ্টতা বেশি, পাকা ফলের ভেতরের রং একটিতে গাঢ় হলুদ থেকে গাঢ় কমলা রঙের, অপরটিতে লাল রঙের। পাকা পেঁপেতে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে তেমনি কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এক প্রকার হজমকারী দ্রব্য। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও খুব উপকারী।
এ জাতের বীজ জানুয়ারি মাসে বপন করা হয় এবং মার্চে উৎপাদিত চারা রোপণের উত্তম সময়। চারা লাগানোর ৬০/৭০ দিনের মধ্যে ফল ধরে। এ জাতের পেঁপেতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি।
পেপে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও পেঁপে আরও নানা গুণের অধিকারী। কথায় আছে ‘দৈনিক একটি করে পেঁপে খাও, ডাক্তার বৈদ্য দূরে তাড়াও’। তিনি আরও বলেন, পেঁপে একটি পরপরাগায়িত ফল। পেঁপের ৩২ লিঙ্গের গাছ থাকলেও পুরুষ, স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছই পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে আমরা শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছি। স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপে গাছে ফল ধরে। প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় (১.৫-৩.৫ কেজি।
গবেষক আইভী আরও বলেন, চাষিরা যাতে প্রতিটি মাদায় ১টি মাত্র চারা রোপণ করে সব চারাতেই ফল পান এবং ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হয়। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তার নেতৃত্বে টানা ৫ বছর গবেষণা চালিয়ে সুস্বাদু ফল ও সবজি পেঁপের এমন দেশিয় জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশের ক্রমাগত কৃষি জমি হ্রাস ও জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে ফল ও সবজি চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে ২০০৮ সালে পেঁপে গবেষণার কাজ হাতে নেয়া হয়। দেশিয় পেঁপের কৌলিসম্পদ ব্যবহার করে নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করা হয়। দেশিয় পেঁপের পরপরাগায়িত বীজ হতে চারা উৎপাদন করে প্রজনন ও জেনেটিক পিওরিফিকেশন এর মাধ্যমে। গাইনোডোইওসিয়াস ধরনের কয়েকটি উন্নত লাইন বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত লাইনগুলো হতে শতভাগ ফলবান পেঁপে গাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। চীন, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানে এ ধরনের গবেষণা হয়েছে এবং সেই গবেষণার ফল কাজে লাগিয়ে চাষাবাদও হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, পেঁপে হলো আমাদের একটি খুব প্রিয় ফল। এর পুষ্টিমান খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি পেঁপে গাছে যাতে ফলন হয়, সে ব্যাপারে গবেষকরা কাজ করছেন। ইতিমধ্যে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে বিইউ পেঁপে-১ ও বিইউ পেঁপে-২ নামে দুটি পেঁপের জাত ছাড় করা হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত জাতগুলোর গুণগতমান ঠিক রেখে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জেনেটিক পিওরিফিকেশন করে সুপ্রিম সিড কোম্পানির মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য দেওয়া হয়। বিইউ পেঁপে-১ জাতটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যখন দেশে ফল কম থাকে তখন উফশী ও প্রচুর মিষ্ট জাতের এ পেঁপে মানুষের ফলের জোগান দেয়। এ পেঁপে কৃষি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের দেহের পুষ্টি তথা স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পুষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের পেঁপের এ জাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কৃষকরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, পেঁপে ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি এ যাবত ৬০টি বিভিন্ন শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন