শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ের হিড়িক

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত দেড় বছরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩০টি মাদরাসা অধ্যায়নরত ৪০৭ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে এই উপজেলায় ঝড়ে পড়েছে ১৯৪৬ জন শিক্ষার্থী। যাদের বেশিরভাগই শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে ভোগডাঙা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯২ স্কুল ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। আর মাদরাসা পর্যায়ে একক প্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক বিয়ে হয়েছে ৪৮ জনের, রাজারহাট জাওহারিয়া দাখিল মাদরাসায়। এছাড়াও প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সদর উপজেলায় মোট ৮১ টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। এদের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।
এদিকে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার স্কুল ছাত্রীরা। এই উপজেলায় ৫৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৮টি মাদরাসা মিলে ৫৭৭ স্কুল ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। জেলার সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ৬ উপজেলায় ২ হাজারেরও বেশি স্কুল ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের মধ্যে সদরে ৪০৭, নাগেশ্বরীতে ৫৭৭, ফুলবাড়ীতে ৫২৩, ভূরুঙ্গামারীতে ১৬০, চিলমারীতে ১৫৪ এবং রাজীবপুরে ২৫৫ স্কুলছাত্রীর বিয়ে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় এখনও প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই দুই উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। বিয়ে হয়ে যাওয়া ছাত্রীদের অনেকে স্কুলে ফিরতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এতো বেশি পরিমাণ স্কুলছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাবে এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। গত দেড় বছরে এসব বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয়েছে। তবে বিয়ে হয়ে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরতে শুরু করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রসঙ্গে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে স্কুল খোলার পর যারা ক্লাসে আসছে না তারা ঝড়ে পড়েছে। কিন্তু এই সংখ্যা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যা বোঝা যাবে না।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘এখনও সব উপজেলার তথ্য হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমরা সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজ করছি। সবগুলো উপজেলার তথ্য পেলে বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যেভাবে বাল্যবিয়ে বেড়েছে তাতে ভাবনায় পড়েছি। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে গেলে প্রশাসনের সহায়তা দরকার। এটি প্রতিরোধ করতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত খারাপ হয়ে দাঁড়াবে।’
লোকাল জনপ্রতিনিধিরা এসব বাল্যবিয়ে সম্পর্কে অবহিত থাকেন জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা রেজিস্ট্রারসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন