শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ড ষড়যন্ত্রের অংশ

প্রত্যাবাসন বিলম্বিত চায় কতিপয় চক্র

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে ও মাদক ব্যবসা নির্বিঘ করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মহিবুল্লাহকে (৫০) গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার ইস্ট-ওয়েস্ট ১ নম্বর বøকে তার নিজ অফিসে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে।

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মহিবুল্লাহর ছিল অগ্রণী ভ‚মিকা। তার এই হত্যাকান্ড রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের যে প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে তা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলেও মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

গত সপ্তাহ দেড়েক আগে কক্সবাজার উখিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করে গেলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার। মাত্র দুইদিন আগে কক্সবাজার সফর করে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি ড. বেনজির আহমদ। ঠিক এর পরদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকাশ্যে গুলি করে একজন শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার বিষয়টি বড় ধরনের প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল কিছু এনজিওর ব্যাপারে। তাদের ইন্ধনে কয়েকটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রত্যাবাসন বিরোধী ভুমিকা পালন করে আসছিল শুরু থেকেই। এদিকে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে নেয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় ও মানবিক সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রশংসিত হয়েছে। এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সরকার তাদের অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মহিবুল্লাহসহ অধিকাংশ রোহিঙ্গারা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আসছিল। তাই এই ধরনের প্রেক্ষাপটে মুহিবুল্লাহর হত্যার বিষয়টি প্রত্যাবাসনবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার এশার নামাজ শেষে ঘরে ফিরলে তিনজন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত খুব কাছে থেকে তাকে ৫ রাউন্ড গুলি করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।

ঘটনার পর মুহিবুল্লাহর ভাই প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুল্লাহ বলেন, সন্ত্রাসী আরসা গ্রুপের সদস্যরা ইর্ষাপরাছু হয়ে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে। ওই সময় হত্যাকারী দলে ১৫/২০ সন্ত্রাসী ছিল। মাস্টার আব্দুর রহিম, লালু ও মুর্শেদসহ তিন জনের নামও বলেছেন তিনি। তিনি তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এদিকে নিজেদের দ্ব›েদ্বর কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ১৪ নম্বর ‘এপিবিএন’র পুলিশ সুপার নাইমুল হক। এছাড়াও ক্যাম্পের ভেতরে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে মুহিবুল্লাহর জোরালো ভ‚মিকা ছিল বলে জানা গেছে। এতে তারা মুহিবুল্লাহর উপর ক্ষিপ্ত ছিল। খবর নিয়ে জানা গেছে, এখন থেকে ২০/৩০ বছর আগে ১৫ জন সদস্য নিয়ে মিয়ানমারের আরাকানে গড়ে তোলেছিলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হউম্যান রাইটস বা এআরএসপিএইচ›।

রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালের পর বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গেও গড়ে তেলেন যোগাযোগ। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা নেতার অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন। দক্ষ মুহিবুল্লাহ ২০১৭ সালের পর ব্যাপকহারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার পর ধীরে ধীরে বিদেশিদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে।

এদিকে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা বাংলাদেশ সরকারের উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডবিøউ) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মহিবুল্লাহর মৃত্যুতে তারা একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারিয়েছেন।

একইভাবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাÐের নিন্দা জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয় একজন প্রতিনিধি ছিলেন মুহিবুল্লাহ। তিনি ক্যাম্পের সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সমর্থন দিয়েছেন শরণার্থীদের মানবাধিকারের পক্ষে এবং তা সুরক্ষিত রাখায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mohammad Osman ১ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
এই ঘটনায় কৌশলে করা হয়েছে মুফতি কাজী ইব্রাহিম কে গ্রেফতার করার ফর কিভাবে এই ঘটনা চাপা পড়ে যায় তাই আরেকটা ঘটনা ঘটিয়েছে
Total Reply(0)
Shakawat Basher ১ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে গেছে মুহিবুল্লাহ
Total Reply(0)
মোঃ নুর ইসলাম মজুমদার ১ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
যারা মেরে ফেলেছে তারা বৌদ্ধ ধর্মের সাথে ও কূটনীতিকের সাথে জড়িত আছে মিয়ারমারের প্রশাসনের কৌশলের কারণে মারা হচ্ছে যারা বুদ্ধিজীবী রোহিঙ্গা মুসলিম তাদেরকে
Total Reply(0)
Md Kamal ১ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
এই রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক , বিশ্বের বিভিন্ন বড় নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেশে সম্মানের সাথে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক কূটনীতিক শেষটা চালিয়ে গিয়েছিলেন ,অর্থাৎ আমাদের পাশের দেশ যেমন ভারত এমনকি বার্মা ভারত কখনো চাইনি এ রোহিঙ্গা আমাদের দেশ থেকে বার্মা ফিরে যাক, অর্থাৎ এই মহিবুল্লাহকে হত্যার পিছনে, ভারত এবং কি ভার্মার কিছু সন্ত্রাসী থাকতে পারে, যেন এঁরা বাংলাদেশ থেকে কখনো বার্মা যেতে না পারে তাই এ মহিবুল্লাহ নেতৃত্ব বাধা দেওয়ার এই প্রক্রিয়া, তাই আমি আমার বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে, এই রোহিঙ্গা এবং মুহিবুল্লাহকে মুসলিম হিসেবে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করেন,, যেন সম্মানের সাথে এ রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক এ প্রত্যাশা করি,,
Total Reply(0)
Helal Uddin Sagar ১ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
মুল কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গারা একেবারে বাংলাদেশে থাকার জন্য তাদের নেতা মহিবুল্লাহ কে হত্যা করেছে, কারণ রোহিঙ্গাদের কে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম থেকে এই মহিবুল্লাহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল, এবং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার জেরে তাকে হত্যা করেছে হয়তো,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন