আলুর অব্যাহত দরপতন আর ক্রেতার অভাবে কুড়িগ্রামের হিমাগারে বিপুল পরিমাণ অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মৌসুম শেষ হয়ে এলেও হিমাগারে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি আলু। তার ওপর দিনে দিনে কমছে আলুর দাম। মিলছেনা ক্রেতাও। তাই লোকসান কমাতে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা আলু রপ্তানির উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ করে কৃষকরা। এবছর আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে বেশি। তার ওপর প্রতি বস্তা আলুতে হিমাগার ভাড়া বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা। অথচ আলুর দাম দিনে দিনে কমছে। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বিরাজ করছে হতাশা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিকেজি আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে খরচ পড়েছে ১৭-১৮ টাকা। অথচ বতমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে সাড়ে ১০ টাকা। লোকসানের কারণে কৃষকরা আলু বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। তার ওপর ক্রেতা সঙ্কটও রয়েছে।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারের আলু ব্যবসায়ী সোলেমান আলী জানান, মোকামে চাহিদা কম থাকায় তারা আলু কিনতে পারছেন না। গত বছর করোনাকালে ত্রাণ হিসেবে আলু বিতরণ ও বিদেশে আলু রপ্তানি হলেও এবার ভিন্ন চিত্র। তাই আলুর চাহিদা দিনে দিনে কমছে। কমছে দামও। এক ট্রাক আলুর কিনে বিক্রির আগেই পড়ে যাচ্ছে দাম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে হিমাগার রয়েছে ৪টি। এগুলো হচ্ছে এ হক হিমাগার লিমিটেড, সেকেন্দার বীজ হিমাগার লিমিটেড, বাবর কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেড ও মোস্তফা কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড। কুড়িগ্রামে এই মৌসুমে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলু। চারটি হিমাগারে সংরক্ষিত হয়েছে ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলু।
ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সুত্রে জানা গেছে, এর অর্ধেকও বেশি আলু মজুদ আছে। বিক্রির সময় আছে মাত্র দু’মাস। আলু রপ্তানির উদ্যোগ না নিলে ঋণের বোঝা বৃদ্ধিসহ বিপুল লোকসানের আশঙ্কা হিমাগার মালিকদের। সেকেন্দার বীজ হিমাগারের মালিক সেকেন্দার আলী জানান, তার হিমাগারে সংরক্ষিত ২ লাখ বস্তা আলুর মধ্যে এখনও এক লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু অবিক্রিত আছে। স্বল্প সময়ে অবশিষ্ট আলুর সবগুলো বিক্রির সম্ভাবনা নেই। তার উপর চাহিদা কম থাকায় বিক্রি হচ্ছে খুবই কম। কুড়িগ্রামের এ হক হিমাগার লিমিটেড-এর ম্যানেজার মোমিন মিয়া জানান, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত আলুর ওপর বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়েছে, কাজেই আলু বিক্রি না হলে হিমাগার মালিকরাও ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়বেন।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মাকেটিং অফিসার মো. নাসির উদ্দিন জানান, আলুর বাজার নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে প্রতিকেজি আলুতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে প্রায় ৬ টাকারও বেশি। এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিধার্রণ করতে উর্দ্ধতন মহলে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন