বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় মানচিত্র

কপোতাক্ষ ও ভদ্রা নদীতে ভাঙন

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৯ এএম

খরস্রোতা কপোতাক্ষ ও ভদ্রার ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত দুই যুগে এ দুটি নদীর ভাঙনে মানচিত্র থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। চলমান ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছেন স্থানীয় দেলুটি ও রাড়ুলী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া, রাড়ুলী, আগড়ঘাটা, সোনাতনকাটি, কপিলমুনি, কাশিমনগর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে পানির চাপ বাড়লে নদী ভাঙে। ভারী বর্ষণে নদী ভাঙে। কখনো কখনো নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বেড়ে যায় উপকূলীয় নদনদীর পানি। বাড়তি পানির চাপেও নদী ভাঙে। কপোতাক্ষ-ভদ্রা পাড়ের মানুষ সব সময় নদী ভাঙন আতংকে থাকেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও নদী শাসন বা ভাঙন প্রতিরোধে দু’পাড় রক্ষায় নেয়া হয়নি কোনো টেকসই পদক্ষেপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাড়ুলী, আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, হাবিবনগর, সোনাতনকাটি, মাহমুদকাটি, রহিমপুর, কপিলমুনি ও কাশিমনগর এলাকায় সম্প্রতি নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাড়ুলীর মালোপাড়ায় ঘর-বাড়ি, গাছপালা, রাস্তা ও জমি নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদের তীব্র স্রোতের তোড়ে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে স্থানীয়রা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। ভাঙন এলাকার কিছু কিছু ঘর নিচের অর্ধেক মাটি নদে ধসে পড়েছে। ঘরগুলি নদের ওপর ঝুলছে। যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। দ্রুত ভাঙন রোধ করতে না পারলে, রাস্তাসহ ঘরবাড়ি এবং ফসলী জমি নদেগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
পাইকাগাছা উপজেলার ৮নং রাড়ুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড রাড়ুলী গ্রামে মালোপাড়া অবস্থিত। মালোপাড়ার পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ বয়ে গেছে। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর মালোপাড়ায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙন অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করছে। ইতোপূর্বে প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর জমি হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে। রাড়ুলী ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ গাজী জানান, ৪০ বছর ধরে মালোপাড়া এলাকায় কপোতাক্ষের ভাঙন অব্যহত আছে। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরেও ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভাঙন এলাকায় বসবাসরত আব্দুস সাত্তার সানা জানান, তিনি এ পর্যন্ত ৫ বার বাড়ি বদল করেছেন। এবার ঘরটি নদীতে ভেঙে গেলে তার আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। মালোপাড়ার সূর্যকান্ত বিশ্বাস জানান, প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন পরিদর্শন করে যায়, কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো কাজ করা হয় না। তিনি ৩ বার বাড়ি বদল করেছেন। স্থানীয় মনোরঞ্জন বিশ্বাস, উত্তম বিশ্বাস, তপন বিশ্বাস, বাবু বিশ্বাস, পবন বিশ্বাস, রতন বিশ্বাস, অমল বিশ্বাস, সুকুমার বিশ্বাস তারা সবাই ১ থেকে ২ বার করে বাড়ি বদল করেছেন। নদের তীরে যে জায়গায় তারা বসবাস করছেন এই জায়গা ভেঙে তাদের নতুন করে ঘর বাঁধার কোনো জায়গা থাকবে না। সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, বিগত বছরের ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় ৩০-৪০ ফুট জায়গায় জিও ব্যাগে বালি ভরে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাকি অংশের কাজ না করায় ভাঙন অব্যহত রয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মালোপাড়ার বাসিন্দারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তারা আরো জানান, গত বছরে ভাঙন রোধে জিওব্যাগের বরাদ্দ নেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার সামান্য কিছু কাজ করে বাকি কাজ না করে চলে যাওয়ায় মালোপাড়ার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছার সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাজু হাওলাদার জানান, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে, পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর নলডাঙ্গা ও দারুনমল্লিকের গাইনের মল ভদ্রা নদীর ওয়াপদা বাঁধে আবারও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক ফাটল দেখা দেয়ায় জনমনে মারাত্মক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার দেলুটি ইউনিয়ন চারিদিকে নদী, দ্বীপ বেষ্টিত একটি ইউনিয়ন। প্রতি বছর সিডর, আইলা আম্ফানের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা আক্রান্ত হয়েই আসছে। বিপদ সংকেত পেলেই এলাকাবাসী চরম আতংগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে নদী ভাঙন লেগে আছে ২৫/৩০ বছর ধরে। বার বার ভদ্রা নদীর ভাঙনে পরিবর্তন হচ্ছে মানচিত্র। দেলুটি ইউনিয়নের অসংখ্য বাড়ি ঘর জায়গা জমি বিলীন হয়েছে ভদ্রা নদীর গর্ভে। ভূমিহীন হয়েছে শত শত পরিবার। আবার ভাঙন দেখা দেয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল ঘটনা স্থলে পরিদর্শনে যান। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। ভাঙন রোধে আপাতত জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন জানান, এলাকাটি খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। ভাঙন লেগেই আছে। দ্রুত ভাঙন রোধ করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন