মো. সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে
বান্দরবান জেলা শহরের পাশে রোয়াংছড়ি উপজেলার ছাইংগ্যা দানেশ পাড়ায় প্রকাশ্যে দিবালোকে ড্রেজার দিয়ে এবিএম ইটভাটার মাটি যোগান দিতে বিশাল কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে চলেছে এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা। জেলার শহরের এত সংন্নিকটে প্রকাশ্যে ‘এবিএম’ নামে ইটভাটার মালিক গত ১৫ দিন ধরে ড্রেজার দিয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব চালিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের রহস্যজনক নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এবিএম ইটভাটার মালিক মো. মনিরুজ্জামান মিলন দিবালোকে পাহাড় কেটে চললেও প্রশাসনের নীবর ভূমিকার কারণে ছাইংগ্যা দানেশপাড়া ও কালাঘাটাসহ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে প্রতি বছর বেড়ে চলছে পাহাড় ধসে প্রাণহানিসহ ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা। এছাড়াও প্রতিদিন ব্যাপকহারে পাহাড় কাটার ফলে জেলা শহরের পাহাড়গুলো প্রায় বিলীনের পথে রয়েছে। স্থানীয়রা আরো জানান, ছাইংগ্যায় সরকারি বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম ইটভাটাটি। এবিএম ইটভাটার নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, লাইন্সেনসহ নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। এভাবেই অবৈধ পন্থায় বিগত ৭/৮ বছর যাবত চলছে উক্ত এবিএম ইটভাটার কর্মকা-। এদিকে, ছাইংগ্যায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় অভিযোগ জানানো সত্ত্বে¡ও পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে ইতোমধ্যেই বিশাল একটি পাহাড়ের অর্ধেকাংশ সাবাড় করে ফেলেছে এবিএম ইটভাটার মালিক। উক্ত ইটভাটার মালিকের অবৈধ কর্মকা- এবং প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ছাইংগ্যা এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, জেলায় প্রশাসন বলতে কিছুই নেই বলে মনে হচ্ছে। প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চললেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সরকারি কর্মকর্তারা। স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে এবিএম ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করার সময় পাহাড় ধসে একজন লোক মাটিচাপা পড়ে মারা যায় এবং কয়েকজন আহত হয়। এবারো ঐসময়ের মতো প্রাণহাণির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাইংগ্যা এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলন আ’লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছেমতো যেনতেনভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে এবিএম ইটভাটার মালিক মনিরুজ্জামান মিলন পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার কিছু নিচু জায়গা আছে তা ভরাট করার জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর রোয়ায়ংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং তার কাছে পাহাড় কাটার বিয়য়ে জানতে চাইলে অদৃশ্য কারণে তিনি কিছুই দেখতে পায়নি বলে সাংবাদিকদের জানান। পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক মাসুদ করিম বলেন, পাহাড় কাটা আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী একটি কাজ, তাই কেউ যদি অবৈধভাবে পাহাড় কাটা হলে খুব শিগগিরই সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, ছাইংগ্যা এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিষয়টি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি খুব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন