গরিবের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু সেই ভরসাস্থলেও সেবা নেই অসহায় গরিব রোগীদের। সেবার পরিবর্তে নানা ভোগান্তির শিকার শিশু-কিশোর, নারী ও বয়বৃদ্ধ রোগীরা। বর্তমানে ডায়রিয়া, জর ও সর্দি-কাশি রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে তাদের গৃহপালিত ছাগল, হাঁস-মুরগ বিক্রি করে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আর যারা নিঃস্ব তারা নিরুপায় হয়ে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক ডাক্তার থাকেন সিলেটে। আবার বিশ^নাথ উপজেলা সদরে রয়েছে তার মনমুগ্ধ প্রাইভেট চেম্বার। হাসপাতালে জরুরি রোগী আসার খবর পেলে দ্রুত চলে যান হাসপাতালে। এসব রোগীদের জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি দিয়েই কর্তব্যরত চিকিৎসকদের যেন দায় শেষ হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন অভিযোগ নিত্য দিনের। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভয় দেখানো হয় মামলার। তাই রাজার হালে এই হাসপাতালে চাকরি করছেন সরকারি এসব ডাক্তাররা। সরকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে ৩১ শয্যার এই হাসপাতালকে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেছে। এ হাসপাতালে, ডাক্তার আছে, রোগীও আছে নেই শুধু চিকিৎসা সেবা।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ড ও পুরুষ ওয়ার্ডে ৮ থেকে ১০জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। উপজেলার আমতৈল গ্রামের আম্বর আলী স্ত্রী সুমনা বেগম, মকদ্দুছ আলীর স্ত্রী খায়রুন নেছা, ধলিপাড়া গ্রামের রিমা বেগমসহ আরো ৩/৪জনের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হয়। তারা জানান, কেউ ৩দিন, কেউ ৪দিন আবার কেউ ৫দিন আগে তাদের বিভিন্ন বয়সের শিশুদের এই হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু ওয়ার্ডে কোন ডাক্তারের দেখা মিলেনি। ওয়ার্ডে নামমাত্র একজন নার্স আছেন। ইনজেকশন পুশ করতে হলে এই নার্সের কাছে যেতে হয়। তাছাড়া ডাক্তার দেখাতে হলে দু’তলা থেকে শিশুদের কোলে করে নিয়ে নিচতলায় যেতে হয়। তাও ভাগ্য ভাল থাকলে ডাক্তারের দেখা মিলে। কারণ ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। এভাবেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা জর, সর্দি, কাশি, ডায়েরিয়া, নিমোনিয়া ও শ্বাষকষ্টের রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে রোগীর সাথে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে রোগীরা ভীড় করে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়াও বহির বিভাগে দীর্ঘ সারিতে ডাক্তার দেখিয়ে সিøপের ওষুধ না পাওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আমতৈল গ্রামের মইন উদ্দিনের স্ত্রী রুবেনা বেগম এমন অভিযোগ করে ক্লান্ত হয়ে শিশু কন্যাকে নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে পড়েন। গত এক সপ্তাহ আগে এক জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক ১১মাস বয়সি কন্যা শিশুর ডায়রিয়া হলে এই হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৪/৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তারের দেখা না পেয়ে সিলেটের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের ফার্মসিস্ট হেলাল আহমদ জানান, প্রতিদিন যে ঔষধ তিনি পান সে ঔষধ শেষ হয়ে গেলে কি আর করা যায়।
এমন অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে রেগে যান। এরপর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইয়াছিন আরাফাতকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে বলেন, এরপর থেকে যেন এমন অভিযোগ আর শুনতে না হয়। প্রতিদিন যেন ওয়ার্ডে একজন ডাক্তার যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন