বাংলাদেশের অটোমোটিভ খাত জাপানি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। গতকাল ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং জাপান দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি শিরাহাতা কাসুমি।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান করোনা মহামারিতে টিকা প্রদানের জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৯২১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে আমদানি ও রফতানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৭২০ দশমিক ৭০ এবং ১২০০ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে জাপানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ১১৮৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে আশা করি সামনের দিনগুলোতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও স¤প্রসারিত হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে ৩২১টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩৯৭ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের পণ্যই জাপানে বেশি রপ্তানি করে থাকে। তবে জাপানে বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্য রফতানিতে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিশেষ করে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে জাপানকে এগিয়ে আসার আহবান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ডিসিসিআই ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে সাত দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিটুবি ম্যাচ-মেকিং-এ ৫টি জাপানি কোম্পানি এতে অংশ নেবে। এসময় ডিসিসিআই সভাপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, সামনের দিনগুলোতে জাপানি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের অটোমোটিভ খাত জাপানি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জাপানের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক গতিধারা সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরেছে। করোনা ভ্যাকসিন প্রদানে জাপানের সহায়তা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দেন তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ ঢাকার অদূরে আড়াইহাজারে ‘জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের কাজ শেষ হলে জাপানি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে চলমান কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
জাপানভিত্তিক মোটর কোম্পানি মিতসুবিশি সম্প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের লক্ষ্যে তাদের সম্ভ্যাবতা জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে নিজেদের কারখানা স্থাপনে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। আরও বেশি হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে তিনি বিশেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ দ্উততর সময়ে সম্পন্ন করার ওপর জোর দেন। রাষ্ট্রদূত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের অধিকতর সম্প্রসারণে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দেন এবং এ লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার ও বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন