এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সবগুলো প্রধান সড়কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার প্রধান সড়কগুলোতে কোনো ধরনের সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে যাত্রীদের চলতে-চড়তে গিয়ে কোমর ভাঙার অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাগুলোর এমন করুণ হাল হওয়ায় মহাজোট সরকারের শরিক দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি), উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পুরনো সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সরকার দলীয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালখালী উপজেলার প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-আরাকান সড়কের গোমদ-ী ফুলতলা থেকে উপজেলা ও পৌর সদর হয়ে কানুনগোপাড়া-পদুয়া সড়ক। প্রায় তিন বছর পূর্বে এ সড়কটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। কাজ শুরু করলেও রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সৃষ্টি করা অজানা ঘূর্ণিঝড়ে আবার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বোয়ালখালীর প্রধান সড়কের সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ। আর সেখানেই থমকে যায় উন্নয়ন নামের সোনার হরিণ। দীর্ঘ ৩ বছর পর্যন্ত (সওজ), সরকার বা জনপ্রতিনিধিগণ কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেয়ায় একে একে উপজেলার প্রধান সড়কটি পরিণত হয় লক্কড়-ঝক্কড় কোমর ভাঙা সড়কে। বোয়ালখালীর প্রধান সড়কটি এখন প্রতিনিয়ত যাত্রীদের যন্ত্রণার সড়কে পরিণত হয়েছে। আরাকান সড়কের ফুলতলা থেকে কানুনগোপাড়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটারের সড়কটির সব অংশ জুড়েই সৃষ্টি হয়েছে যন্ত্রণার খড়গে। একদিকে দীর্ঘদিন সংস্কার-মেরামত না করা, অন্যদিকে গেল বর্ষায় ভারী বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি। সব মিলিয়ে এ সড়কটি এখন লাখ লাখ মানুষের দুুর্ভোগের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শত শত শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ রোগীসহ যাত্রী সাধারণের যেন প্রাণ ঘাতে পরিণত হয়েছে। এখানকার এলাকাবাসী অন্তত যোগাযোগ ব্যবস্থায় হলেও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ভোগীর প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ধোরলা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সমাজসেবক মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশে যেভাবে বহুমুখী উন্নয়নের মডেল সৃষ্টি করছেন, সেভাবে শহরতলি খ্যাত বোয়ালখালী উপজেলার কোনো উন্নয়নই হয়নি। এ জন্য তিনি দলীয় কোন্দল ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা, দুর্নীতি এবং আত্মসুদ্ধির দুর্বলতাকেই দায়ী করেন। দলীয় কোন্দল বা নোংরা রশি টানাটানি বন্ধ করে দেশ, মাতৃকা, সমাজ, মাটি ও মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে শুধু নিজ স্বার্থ, পকেট পূজা বন্ধ করার আহ্বান জানান। যাত্রীরা জানান, সড়কে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্তে প্রতিনিয়ত যানবাহন বিকল হয়ে বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইচ্ছে করলে আপদকালীন বরাদ্দ থেকে উপজেলা পরিষদ পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারে। কিন্তু তারা বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কীভাবে পকেটে ঢুকাবে সে হিসেবেই ব্যস্ত থাকে। সরকারি দলের টিকিটের চেয়ারম্যান বলেই তো কথা; এ রকম লাখ জনতা ধুঁকে ধুঁকে মরলেও কি তার আসে যায়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুুব্ধ একাধিক দলীয় নেতা-কর্মী বলেন, যার নাকি ট্যাক্সিতে চড়ার অবস্থা ছিল না সে আজ সরকারি পাজেরোয় ঘুরে ঘুরে বাহারি দাওয়াতে ব্যস্ত। যে ব্যক্তি নির্বাচনে পকেটের টাকা খরচ করে সেন্টার চালিয়েছেন তার সাক্ষাতে কৌশল-বিনিময় তো দূরের কথা তুমি কে? কি জন্য এসেছ? এমন ব্যবহার। এ ধরনের প্রতিনিধি থেকে জনগণ বা দল কী আশা করতে পারে? এমন প্রশ্ন শত শত ভুক্তভোগীর। তারা বলেন, আসলেই বোয়ালখালীবাসীর কপালে আরও দুঃখ আছে, তাই এমন লোক প্রতিনিধি হয়েছে। যেদিকে যাই যেন মরা খালে পরিণত। তবে দোহাজারি সড়ক বিভাগ সূত্রে আশার বাণী জানা যায়, সম্প্রতি আরাকান সড়কের বোয়ালখালী ফুলতলা-কানুনগোপাড়া প্রধান সড়কসহ কয়েকটি সড়কের সংস্কারের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানান। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা জানাতে পারেনি কেউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন