মোঃ মেরাজ উদ্দিন, শেরপুর থেকে
দেশের উত্তর সীমান্তজুড়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর বৃহৎ এলাকায় নয়নাভিরাম গারো পাহাড় অবস্থিত। এ পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করার জন্য প্রায় সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ বেড়াতে আসেন এখানে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় দর্শনার্থীরা এখানে এসে পান আলাদা মজা। এখানে যারাই আসেন তাদের প্রাণ ভরে যায় এখানকার প্রাকৃতিক নয়নকাড়া দৃশ্য অবলোকন করে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ভেসে যায় লেকের মাছ ও পানি। ফলে পানিশূন্য হয়ে লেকের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় প্যাডেল বোর্ড, স্পিড বোর্ড ও ময়ুরপঙ্খি নৌকা। এতে পর্যটকদের আকর্ষণও নষ্ট হয়ে যায়। দর্শনার্থীরা দাবি তোলে এখানকার লেকটির সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনতে। অপরদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ লেকের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় এখানে দর্শনার্থী আসা কমে যাচ্ছে। এতে তাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। তাই তাদেরও দাবি ছিল লেকটির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনাসহ অবকাশ কেন্দ্রের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা। আগামী শীত মৌসুম শুরুর আগেই যেন শেষ করা হয় এসব কাজ এমন দাবিও সবার। এসব দিক বিবেচনা করে এবং সরকার চলতি বছরকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করায় দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ন্যায় গারো পাহাড়ের পাদদেশের গজনি অবকাশ কেন্দ্রের লেকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে শেরপুর জেলা প্রশাসন। বর্তমানে ওই লেকের ভরাট হওয়া তলদেশর মাটি ও বালু উত্তোলন করে আরো গভীর করা হচ্ছে। সেই সাথে লেকের পরিধি আরো বৃদ্ধি করে দেশীয় বিভিন্ন গাছ-গাছালি রোপণ এবং দেশীয় পাক-পাখালির আবাসস্থল করে এক নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে এ পর্যটন কেন্দ্রটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কাজও চলছে জোরেশোরে। শেরপুরের জেলা প্রশাসক ডা. মোঃ পারভেজ রহিম জানান, গত বছর গারো পাহাড়ের পিকনিক স্পটগুলোতে প্রায় ১০ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছিল। এ বছর ১৫ লাখ দর্শনার্থীর আগমনের টার্গেট নিয়ে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। পর্যটন কেন্দ্রের আরো আকর্ষণ বাড়াতে কৃত্রিম লেকের মাঝখান দিয়ে ঝুলন্ত টানা ব্রিজ, লেকের মধ্যে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে কফি হাউস, কৃত্রিম ঝরনা, মিনি চিড়িয়াখানাসহ আরো বেশ কিছু নতুন নতুন আকর্ষণীয় স্পট তৈরি করার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে অবকাশ কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ কৃত্রিম লেকের খনন ও তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ। লক্ষ্য আগামী মৌসুম শুরুর আগেই কাজ শেষ করা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে কাংশা ইউনিয়নে গজনি পাহাড়ের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি টিলায় ‘গজনি অবকাশ কেন্দ্র’ নামে একটি মনোরম পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়। যদিও বর্তমানে এটি আর শুধুই পিকনিক স্পট নয়, এটি এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। এই পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিহরণ জাগানো পাহাড়ের চূড়ায় ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’, সূরঙ্গ পথে পাতালপুরী, ইলেক্ট্রিক ট্রেন ও নাগরদোলা সমৃদ্ধ শিশুপার্ক, গারো মা’র কর্নার, ব্যাঙের ছাতা, মিনি চিড়িয়াখানা, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তমঞ্চ, মৎস্যকন্যা, প্রাগঐতিহাসিক যুগের বিলুপ্ত ডাইনোসর, বাঘ, হাতি, জিরাফ, বানর, কুমির, হরিণসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি। যা দেখে সবার মনকেই আনন্দে উদ্বেলিত করে তোলে। পর্যটন কেন্দ্রটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলে দর্শনার্থীরা আরো মজা পাবেন এমনটাই প্রত্যশা সবার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন