উত্তরবঙ্গে যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তির নাম ছিল বগুড়া মহস্থানগড় সেতু। সেই ভোগান্তি এখন লাঘোব পেয়ে ভর করেচে সিরাজগঞ্জের নলকা সেতুতে। তাই এখন উত্তরে যাত্রার ভোগান্তির নামে যুক্ত হয়েছে হাটিকুমরুল নলকা সেতু।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু এবং পশ্চিম পাশের সড়কে অসংখ্য খানাখন্দে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রাতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। একটু বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরও বাড়ে। কখনও ধীরগতি, কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী যানজট লেগে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন যাত্রীরা। পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কে ফুলজোড় নদীর ওপর নলকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে সেতুটি আঞ্চলিক মহাসড়কে পরিণত হলেও এ সেতুর কোনও পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধনের পর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করছে এ সেতুর ওপর দিয়েই। ফলে সেতুটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নলকা সেতুর বিভিন্ন জায়গায় পিচ ও পাথর ওঠে গেছে। সেতুর জয়েন্টগুলোও হয়ে পড়েছে নড়বড়ে। সেতুর পশ্চিম পাশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সেতুর উভয়পাশে অন্তত ৪০-৫০ মিটার দূর থেকেই গাড়ির গতি কমিয়ে দিতে হয়। এ কারণে সেতুর উভয়পাশে প্রায় দিনই যানজটে শত শত যানবাহন আটকে থাকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাঝে মধ্যে সেতুর সংস্কার করলেও বৃষ্টিপাতের কারণে সেতুটির পিচ ওঠে এক্সপানশন জয়েন্টগুলো ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার ট্রাক ড্রাইভার মিজান জানান, নলকা সেতু ও সেতুর পশ্চিমে সামান্য সড়ক সংস্কার না করায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলোকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে সেতুর উভয়পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে যানজট লেগেই থাকে।
এসআই পরিবহনের বাস চালক আজাদ বলেন, হাটিকুমরুল গোলচত্বর মহাসড়ক এলাকায় ঢুকলেই যানজটের আতঙ্ক শুরু হয়। শুরু হয় অপেক্ষার পালা আর ভোগান্তি। তিনি আরও বলেন, রাতে যখন পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বাড়ে তখন যানজট আরও দীর্ঘ হয়। তাই এখন ভোগান্তির নতুন নাম ‘নলকা সেতু’।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, নলকা সেতুর দু’পাশে ছোট, বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর ওপরের কার্পেটিংও উঠে গেছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলে গতিসীমা কম রাখতে গিয়ে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে অনেক সময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে রাতে মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে যায়। সেতুর পশ্চিম পাশে মহাসড়কের কিছু জায়গায় ছোট-বড় খানাখন্দের কারণেই এই যানজট আরও বাড়ে।
হাইওয়ে পুলিশের (বগুড়া অঞ্চল) পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি লেগে গাড়ি ছাড়তে হয়। আর সেতুর উভয়পাশে রাস্তা খানাখন্দ হওয়ায় গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তিনি সেতু ও সেতুর পাশের রাস্তার সংস্কারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম তরফদার বলেন, সেতুর পশ্চিম পাশে বেশ কিছু ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো তুলে দ্রুত কার্পেটিংয়ের কাজ করা হবে। এছাড়া সেতুর সংস্কারের কাজও দ্রুত কর হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন