চট্টগ্রামে তীব্র যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। রাস্তায় নেমেই চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছে নগরবাসী। উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, সমন্বয়হীন খোঁড়াখুড়ি এবং সেই সাথে বর্ষা আর জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত না হওয়ায় এমন নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোন কোন সড়কে যানজট স্থায়ী হচ্ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় তীব্রজট অতীতের সকল রের্কড অতিক্রম করেছে। এতে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল পরিবহন মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। যানজটে আটকা পড়ে মানুষের কর্মকঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। অপচয় হচ্ছে জ¦ালানি তেলের।
আজ বুধবার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সরকারি ছুটির আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো নগরীতে ছিলো তীব্র যানজট। নগরীর প্রধান সড়কের পতেঙ্গা থেকে আগ্রাবাদ হয়ে সিডিএ অ্যাভিনিউ এবং মুরাদপুর, বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত এলাকা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। পোর্ট কানেকটিং রোড হয়ে অলংকার মোড় থেকে এ কে খান মোড়, জাকির হোসেন সড়ক, ষোলশহর থেকে বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক হয়ে অক্সিজেন মোড়, বহদ্দারহাট হয়ে কালামিয়া বাজার থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু। মেরিনার্স রোড হয়ে রিফিঙ্গি বাজার, নিউমার্কেট, আইস ফ্যাক্টরি রোড, মাঝিরঘাট হয়ে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত ছিলো অসহনীয় যানজট।
পতেঙ্গা এলাকার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো এবং চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনে ঠাসা ছিলো পতেঙ্গা থেকে বন্দর এলাকার প্রধান সড়ক। একই দৃশ্য দেখা গেছে নগরীর সিটি আউটার রিং রোড, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত টোল রোডেও। পোর্ট কানেকটিং রোডের বন্দর নিমতলা থেকে সাগরিকা হয়ে সিটি গেইট পর্যন্ত ছিলো ভারী যানবাহনের জট। এসব সড়কের তীব্র জট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
নগরীতে প্রধান প্রধান সড়কের তীব্র জট বিস্তৃত হয় আশপাশের সড়কেও। নগরীর মাঝিরঘাট, সদরঘাট, কদমতলী, টাইগারপাস সড়কের পাশাপাশি স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জসহ প্রায় সব এলাকায় ছিলো অসহনীয় যানজট। এক কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যানজটে আটকে পড়ে গণপরিবহন যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশকে গলদঘর্ম হতে হয়।
প্রধান সড়কে পতেঙ্গা থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। কাজে ধীরগতির কারণে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড হয়ে আগ্রাবাদ এবং দেওয়ানহাট পর্যন্ত সড়কে যানজট স্থায়ী হয়ে গেছে। সড়কের অনেক অংশ এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। সড়কে বড় বড় গর্ত ডোবার আকার নিয়েছে। ইট, বালু দিয়ে এসব সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগি করার দায়িত্ব সিডিএর। তবে তারা তা করছে না। যানবাহনের চাকা এসব গর্তে আটকা পড়ে যানজট হচ্ছে।
বন্দর এলাকায় প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। যার বিরাট অংশ আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন। ভারী যানবাহনের চাপে টালমাটাল অবস্থা বন্দরের আশপাশের সব সড়কে। পোর্ট কানেকটিং রোডের সম্প্রসারণ কাজও শেষ হয়নি। ফলে সেখানেও তীব্র যানজট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থা মাঝিরঘাট সড়কের। সিটি কর্পোরেশন সড়কটির উন্নয়ন কাজ করছে। অর্ধেক শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে সড়কের বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পশ্চিম মাদারবাড়ি অংশ যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা নগরীর বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কে। বছরের পর বছর ধরে ওই সড়কে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ চলছে।
নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। প্রবল জোয়ার, পাহাড়ী ঢল আর ভারী বর্ষণে ক্ষতবিক্ষত সড়ক মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষ করেনি সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের হিসাবে, নগরীর ২০ কিলোমিটার সড়ক পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। যথাসময়ে সংস্কার না করায় এসব সড়কের অবস্থা এখন আরও বেশী শোচনীয়। বেহাল সড়কের পাশাপাশি নগরীতে অবৈধ যানবাহনের চাপ যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিশেষ করে অবৈধ রিকশা এবং ব্যাটারিচালিত টমটমের চাপে সড়কে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে রয়েছে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা। ব্যস্ততম সড়কে যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। মহানগরীতে নেই কেন্দ্রীয় কোন বাস এবং ট্রাক টার্মিনাল। প্রধান প্রধান সড়কের একাংশ দখল করে যানবাহন রাখা হচ্ছে। রাস্তার উপর দূরপাল্লার বাসের কাউন্টার খোলা হয়েছে। সেখান থেকে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। এর ফলে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। সড়ক, ফুটপাত দখল করে দোকান-পাট গড়ে উঠেছে। রাখা হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। এতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা নগরজুড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন