বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কুড়িল বিশ্বরোড ও উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এসময় রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকাল ৮টায় রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনসহ ১৩, ১৪ নম্বর সেকশন ও কচুক্ষেত বাজার পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় মিরপুর ১৪ নম্বরে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়।
জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই এসব এলাকার শ্রমিকরা হাজিরা ভাতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। কিছু দাবি মেনে নেওয়া হলেও গত মঙ্গলবার বিক্ষোভের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দুই পোশাক কারখানা শ্রমিককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই মারধরের প্রতিবাদে তারা গতকাল বুধবার সকাল থেকে আবারও রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় বেতন-ভাতাসহ নানা দাবির কথাও জানায় শ্রমিকরা।
এদিকে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভের ফলে পুরো সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে আশপাশের সড়কে তীব্র জটলা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষজন।
কাফরুল থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, তাদের দাবি-দাওয়ার শেষ নেই, কয়েকদিন ধরে হাজিরা ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল। শুনেছি এই দাবিটি বাস্তবায়ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভের সময় দুইজন শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে গতকাল সকাল থেকে তারা রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাকে ইস্যু করে তারা সকাল আটটা থেকে থেকে রাস্তায় জড়ো হতে থাকেন। ১০টার দিকে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে তারা অবস্থান নেয়। এর পেছনে পলিটিক্যাল ইন্ধনও থাকতে পারে। কারণ আন্দোলনরতদের যারা গাইড করছেন তারা অনেকে বাইরের বিভিন্ন ফেডারেশনের। তারা কেউ শ্রমিক নয় কিন্তু উসকানি দিচ্ছেন। ওসি জানান, ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে, মিরপুরে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলনকারী পোশাক শ্রমিকরা। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ও সহকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে পল্লবী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পল্লবী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের চারপাশে কাচের জানালা, দরজা ও ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একটি অংশ সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে হামলা চালায়। পরে সেখানে দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত হলে পোশাক শ্রমিকরা সেখান থেকে সরে যান। এরপর ওই সড়কে বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, শ্রমিকরা মিরপুর ১০ বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় ভাঙচুর করার পর ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন এটি একটি নিয়মিত বিষয়। মাঝে মাঝে তারা বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে নেমে যান। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের আন্দোলন থেকে আবার কর্মস্থলে ফেরানো হয়। তিনি বলেন, আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। কারা পুলিশের কার্যালয় ভেঙেছে, কেন ভেঙেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, আইভিএস ফ্যাশনের কর্মীরা সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বর সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা সেøাগান নিয়ে মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে ১০ নম্বর হয়ে ৭ নম্বর এলাকায় যায়। সেখানে স্নোটেক্স অ্যাপারেলসের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রব নান্নুর লোকজন গার্মেন্টস কর্মীদের ধাওয়া দেয়। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে গার্মেন্টস কর্মীরা পিছু হটে এবং স্নোটেক্সে ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় আশপাশের দোকানপাটেও ভাঙচুর চালায়। এ সময় দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে ভাটারা এলাকায় সড়ক আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার ওয়েমার্ট অ্যাপারেলস লিমিডেট কারখানার ৬০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিয়ে সেøাগান দিতে থাকেন। তাদের বিক্ষোভে কুড়িল বিশ্বরোড-বাড্ডা সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বিক্ষোভে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শ্রমিকদের দাবি, গত দুই মাস ধরে তাদের বেতনভাতা বন্ধ রেখেছে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের বকেয়া বেতন দেওয়া হচ্ছে কিস্তিতে। পরে বেলা দেড়টার দিকে মালিকপক্ষ দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন।
ভাটারা থানার ওসি (তদন্ত) রফিকুল হক জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা হওয়ার পর তারা সড়ক ছেড়ে দেয়। আজকের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে মালিকপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িল থেকে রামপুরাগামী বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করে। এ পথে চলাচলকারী মাহফুজুল আলম নামে এক বাইকচালক বলেন, সকাল থেকেই এ সড়কে যানজট। কিছুক্ষণ একটু চলার পর আবারও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রগতি সরণিতে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, বকেয়া বেতনের জন্য পোশাক শ্রমিকরা সকাল থেকেই কুড়িল রাস্তার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এ কারণেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন