রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পাখি রক্ষায় অর্ধশতাধিক যুবকের মহতী উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

ওরা সবাই শিক্ষিত যুবক। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও আন্দোলনে নেমেছেন। ‘এসো পাখির বন্ধু হই, সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাই’- এ শ্লোগানকে সামনে রেখে “সেতুবন্ধন” সংগঠনের উদ্যোগে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় গাছে গাছে কলস লাগিয়ে চলেছেন। উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে সেতুবন্ধনের পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও কর্মসূচির ধারাবাহিক অংশ হিসেবে দিনভর গাছে গাছে কলস লাগানো হয়। এসময় “সেতুবন্ধন” সংগঠনের এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ওই ইউনিয়নের মছে হাজী পাড়ার প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণ। স্থানীয় বাসিন্দা আছির উদ্দিন জানান, ‘আগত হামরা নানান জাতের পাখি দেখবার পাইছিনো কিšুÍ এলা সেই পাখিগুলান দেখা যায় না। মছে হাজী পাড়ার তরুণ স্বেচ্ছাসেবক জিহাদ-উল-আলম সেতুবন্ধন সংগঠনের এ কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, সেতুবন্ধন সংগঠনের পাখি বাঁচাতে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে এ কর্মসূচি সত্যিই অনেক প্রশংসার দাবিদার। আর তাই আমরাও সেতুবন্ধন সংগঠনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রকৃতিতে চঞ্চলতা সৃষ্টি করা দৃষ্টিনন্দন উপকরণ পাখি রক্ষায় তাদের সাথে আমরাও নিজেদের সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সেতুবন্ধন সংগঠনের সহ-সভাপতি খুরশিদ জামান কাঁকন জানান, আমরা কিছু তরুণ উদ্যমী যুবক পাখির আবাসন নিশ্চিতে এবং পাখির বংশবিস্তার বৃদ্ধিতে “সেতুবন্ধন” সংগঠনে একত্রিত হয়ে পুরো সৈয়দপুরব্যাপী পাখির নিরাপদ আবাসন হিসেবে গাছে গাছে কলস লাগানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আর তারই ধারাবাহিতায় বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে আমাদের এ কর্মসূচি। তরুণ উদ্যোক্তা ও সেতুবন্ধন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জানান, আমরা ২০১২ সাল হতে সৈয়দপুরব্যাপী পাখি রক্ষায় এ কর্মসূচি চালাচ্ছি, আমরা অদূর ভবিষ্যতে পুরো নীলফামারী জেলা জুড়ে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিতে এ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাই। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেছেন। সংগঠনটির পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফরোজ আহমেদ সিদ্দিকী টুইংকেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবীব জনি, উপ-সাংগঠনিক সম্পাদক তামিল হোসেন। এছাড়াও অন্যান্য সদস্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন অত্র এলাকার সাদিকুল ইসলাম, মোক্তাসিন ইসলাম, রবিউল ইসলাম, রহুল আমিন, আব্দুর রশিদ, আবু হানিফা, মহিদুল, রিফাত, নীরব, সাকিব রিয়াজুল, রেহান, মিঠুন প্রমুখ। এদিকে দিন দিন বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে বসতি, ধ্বংস হচ্ছে গাছপালা, বনলতা। বিপরীতে কমছে প্রকৃতির প্রাণ পাখির আশ্রয়। একই সঙ্গে কমছে নানা প্রজাতির পাখি ও পাখির সংখ্যা। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। এ অবস্থার উত্তরণের কথা চিন্তা করে সৈয়দপুরের একদল শিক্ষিত যুবক এগিয়ে এসেছে পাখি রক্ষায়। তাদের ভালবাসায় তৈরি হচ্ছে পাখির ভালবাসা। এক সময় গ্রামে গ্রামে চোখে পড়ত চিল, ডাহুক, পানি ডুপরী, দোয়েল, কোয়েল, শালিক, শ্যামা, কোকিল, টিয়া, প্যাঁচা, হাড়গিলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। নীল আকাশে ডানা মেলা পাখির ঝাঁক আগের মতো আর চোখে পড়ে না। গাছে গাছে পাখির কলরব তেমন শোনা যায় না। নিত্য ভোরে পাখির কলকাকলিতে গ্রাম বাংলার মানুষের আর ঘুম ভাঙে না। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, খাদ্য সংকট, জমিতে অতিমাত্রা রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলেই বিলুপ্তির দিকে ধাবিত এসব পাখি। গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত প্রায় পাখিগুলো ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রায় ৪ বছর আগে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর গ্রামের যুবক আলমগীর হোসেন। তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বন্ধুরা। সেতু বন্ধনের সাধারণ সম্পাদক ও পাখি অভয়ারাণ্য তৈরির উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। এসব পাখি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। পাখি না থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া কৃষিতে পাখিদের ভূমিকা অপরিসীম। এরা ক্ষতিকর পোকা-মাকড় নিধনে ও চাষাবাদে বড় একটা ভূমিকা রাখছে। পশুপাখির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা মানুষকে সজাগ করার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, উঠান বৈঠক, কৃষকদের স্কুল, সাইকেল র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন