পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ঘোষণা করেছেন যে, পাকিস্তান আফগানিস্তানকে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের মানবিক সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, যদি তাদের হাসপাতালে ওষুধের প্রয়োজন হয়, বা তাদের যা কিছু অগ্রাধিকার তারা আমাদের বলবে এবং আমরা তাদের মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকব।’
কাবুলে দিনব্যাপী সফরের পর বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় কুরেশি বলেন, যেভাবে পাকিস্তান তাদের কঠিন সময়ে সাহায্য করেছে এবং যেভাবে দেশটি কয়েক দশক ধরে শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, সে বিষয়টি আফগান সরকার স্বীকার করেছে এবং এ জন্য তারা ‘কৃতজ্ঞ’। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে একটি উত্তরণ, চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তা কাটিয়ে ওঠার জন্য পাকিস্তানকে যা কিছু ভূমিকা পালন করতে হবে, তা তারা করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরে তার সঙ্গে যে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ছিল, তাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও ছিলেন।‘প্রতিনিধিদল নেয়ার বিষয়টি ছিল যাতে মূল আলোচনার পর তারা উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভিসা, বাণিজ্য এবং সীমান্ত চলাচল সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান বের করে।’ তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি তালেবান প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদ সফর করবে।
কোরেশি বলেন, তালেবান নেতৃত্ব সিএএসএ-১০০০ প্রকল্প, টিএপিআই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প এবং ট্রান্সন্যাশনাল রেলওয়ে প্রকল্প সহ আগ্রহের প্রকল্পগুলোতে তাদের সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকে নেয়া অন্যান্য বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, সীমান্ত অতিক্রমকারী আফগানদের জন্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ‘গেট পাস’ নেয়ার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সুবিধার্থে আফগানিস্তান থেকে ফল ও সবজি শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমতি দেবে এবং বাণিজ্যের জন্য সীমান্ত ক্রসিং ২৪/৭ খোলা থাকবে।
তিনি এও ঘোষণা করেন যে, আফগান ব্যবসায়ীরা এখন ভিসা-অন-অ্যারাইভাল পেতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, কাবুলের দূতাবাসও ব্যবসায়ীদের পাঁচ বছরের ভিসা দেয়ার জন্য অনুমোদিত ছিল। কুরেশি আরও বলেন, আফগান নেতৃত্ব পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছিল যে, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার মাটি ব্যবহার করতে দেবে না, যার মধ্যে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর (এফও) এক বিবৃতিতে বলেছে, আজকের আগে, কুরেশি আফগান কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং সহযোগিতা জোরদার করার উপায় নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে কাবুলে এসেছিলেন। রাষ্ট্রীয় ব্রডকাস্টার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, কুরেশি বিমান থেকে নামছেন। তার পেছনে ছিলেন ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ। আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এবং কাবুলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান বিমানবন্দরের দরজায় তাদের স্বাগত জানান। পরে আফগানিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুস সালাম হানাফি কোরেশী ও তার প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আফগান অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
হানাফি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাবুলে স্বাগত জানান, অন্যদিকে কুরেশি তালেবান নেতৃত্বকে তাদের ‘উষ্ণ আতিথেয়তা’ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। তার মন্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি বলেন, পাকিস্তান আফগান জনগণকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর। বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে তার বিস্তারিত ও ফলাফলভিত্তিক আলোচনা হয়েছে। কুরেশি বলেছিলেন যে আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন এবং উভয় পক্ষ বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ সহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
এর আগে বুধবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে আফগানিস্তান নিয়ে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আলোচনায় অংশ নিয়ে আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সাদিক আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রদূত সাদিক তালেবান প্রতিনিধি সহ বৈঠকের অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের জানিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তানে শান্তি স্থিতিশীলতা, সুরক্ষিত সীমান্ত, বর্ধিত সংযোগ, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় পুরো অঞ্চলকে উপকৃত করবে। তিনি পুনরাবৃত্তি করেছিলেন যে, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের গঠনমূলক ভূমিকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা স্বীকৃত।’ সূত্র: ডন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন