পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সোমবার রিয়াদে মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ (এমজিআই) শীর্ষ সম্মেলনে সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করেন এবং আফগান সঙ্কট সহ অন্যান্য বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি, ইমরান খান ক্রাউন প্রিন্স কর্তৃক গৃহীত সউদী আরবের গ্রিন ইনিশিয়েটিভের প্রশংসা করেন।
ইমরান খানের কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দুই পবিত্র মসজিদের কাস্টডিয়ান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্যের অগ্রগতি ও উন্নয়নে। তিনি ‘সউদী ভিশন ২০৩০’-এর জন্য ক্রাউন প্রিন্সের প্রশংসা করেন, যার লক্ষ্য ২১ শতকে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রূপান্তরিত করা। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করার সময়, ইমরান খান সউদী আরবের সাথে পাকিস্তানের গভীর ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সউদী আরবের সাথে পাকিস্তানের কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পাকিস্তানকে অটল সমর্থনের জন্য সউদী আরবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ‘দুই নেতা সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন,’ অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সউদী আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সোমবার মধ্যপ্রাচ্য গ্রিন ইনিশিয়েটিভে ভবিষ্যতের শীর্ষ সম্মেলনের কাজকে সমর্থন করার জন্য একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রিন ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ৩ হাজার ৯০০ কোটি সউদী রিয়াল (১ হাজার ৩৯ কোটি ডলার) ব্যয়সাপেক্ষ দুটি সবুজ উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন, যার মধ্যে সউদী আরব ১৫ শতাংশ অবদান রাখবে এবং ঝড়ের আগাম সতর্কীকরণ এবং মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য দুটি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এ অঞ্চলের জন্য একটি নতুন সবুজ যুগের সূচনা করছি। বিশ্বাস করি যে, এর প্রভাব পরিবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং অর্থনীতি এবং নিরাপত্তায়ও পড়বে’। যুবরাজ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি একটি বৃত্তাকার কার্বন অর্থনীতির ধারণা বাস্তবায়নের জন্য একটি সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করবেন এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, নির্গমন কমাতে এবং আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাত্রা বৃদ্ধিতে এ কেন্দ্র ও কর্মসূচির একটি বড় ভূমিকা থাকবে’। বিদ্যুতের বাজার বিকাশে দেশের অগ্রণী ভূমিকার একটি সম্প্রসারণ হিসাবে যুবরাজ বলেন, তার দেশ এ অঞ্চলে সার্কুলার কার্বন ইকোনমি প্রযুক্তির সমাধানের জন্য বিনিয়োগের জন্য একটি তহবিল প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘সমন্বয়ের স্তর বাড়াতে আমরা ভবিষ্যতে সামিটের কাজকে সমর্থন করার জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা হিসাবে গ্রিন ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেছি’।
সউদী আরবের গ্রিন ইনিশিয়েটিভের প্রশংসা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেছেন। রিয়াদে সোমবার মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ সামিটে আলাপকালে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ২০৩০ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জি তার মোট জ্বালানির ৬০ শতাংশ নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৩০ শতাংশ পরিবহন বিদ্যুতে চলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ২৪শ’ মেগাওয়াট কয়লা প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি এবং সেগুলো ২৭শ’ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে বদলে দিয়েছি। তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। গত ১০ বছরে দেশে ১৫০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে যা পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তার দেশকে সবুজ করার চমৎকার উদ্যোগের জন্য সউদী আরবকে অভিনন্দন জানাই’। খান বলেন, পাকিস্তান সম্প্রতি গ্রিন বন্ড ইস্যু করে ৫০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। তার দেশের বনায়ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ বিলিয়ন গাছ রোপণে বিনিয়োগ করেছি, আমরা ইতোমধ্যে আড়াই বিলিয়ন রোপণ করেছি। ‘আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে আরো ১ বিলিয়ন ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছি’। সূত্র : ডন, ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন