রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নিবর্তনমূলক আইন সংশোধনের দাবি

সম্পাদক পরিষদের আলোচনা সভা দাসত্ব নাকি গণতন্ত্র পরায়ণ সাংবাদিকতা সিদ্ধান্ত নিতে হবে : নূরুল কবির সাংবাদিকতা-সরকার মিলেমিশে এখন একাকার : রিয়াজউদ্দিন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা তৈরি করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানি মামলার আইনসহ এমন সব নিবর্তনমূলক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। সংগঠনটির সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, মত প্রকাশের জন্য কোনো সাংবাদিক আদালতে যাওয়া রাষ্ট্রে প্রত্যাশিত নয়।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ : গণমাধ্যমের অর্জন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই দাবি জানান। আলোচনা সভার প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, দেশের স্বার্থে মত প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে আদালতে যেতে হবে, সেটা কখনও কাম্য নয়। সাংবাদিকদের কাঠগড়ায় নেওয়ার বিকল্প হিসেবে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করার সুপারিশ করেন সৈয়দ মনজুরুল। তিনি বলেন, এটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে এর ওপর সবার আস্থা থাকে। যারা অন্য কিছুতে প্রভাবিত হবেন না।

সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজনের বিষযটি তুলে ধরে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক সমিতি। রাজনৈদিক দলের মত বিভাজন। ঐক্যের অভাবের কারণে আপনাদের দাবিগুলো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলছে। আপনারা বলতে পারবেন না, যে একটা সন্তোষজনক বেতন বোর্ড হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সংবাদপত্রগুলোকে জনস্বার্থ, ন্যায়বিচার, সুশিক্ষা, পরিবেশ, নারী সুরক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতা তৈরির কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, গণতান্ত্রিক সংবিধানগুলো মিডিয়াকে সুরক্ষা দিয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বিচার বিভাগের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মেহেরবানি করে একটু দেখুন। কিছু কিছু আইন আছে, সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। যেমন, মানহানির মামলা। এখানে আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা হতে পারে না। শুধুমাত্র সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মামলা করতে পারবে। তাহলে কেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একই ঘটনার জন্য অনেক অনেক মামলা হয়? যারা সংক্ষুব্ধ নয়, তাদের মামলাও গ্রহণ করা হয়? এটা কি আইনের অমান্য হল না? আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে না?

নিবর্তনমূলক আইন পুনর্বিবেচনা ও সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, সবচেয়ে প্রধান যে আইন সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। এই আইন প্রণয়নের সময় আমরা বিরোধীতা করেছি। আজকে অভিজ্ঞতা কী? কতটুকু সাইবার ক্রাইম আপনারা এই আইন দিয়ে প্রতিহত করতে পেরেছেন? সাম্প্রদায়িকতার বিকট বীভৎস পরিণতি সাইবার স্পেসে হচ্ছে। আপনারা তো থামাতে পারেননি। কিন্তু এই আইন যত্রতত্রভাবে সাংবদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে। তাহলে এই আইন কি সাইবার সিকিউরিটি দিচ্ছে, না কি সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করছে? উপনিবেশিক আমলে প্রণীত অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন বাতিলেরও দাবি জানান তিনি।

সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের কোন বন্ধু নেই। কিন্তু বাস্তবে এখন বন্ধুর অভাব নেই। সাংবাদিকতা-সরকার মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে, আলাদা করা যায় না। এটি সাংবাদিকতার বহুলাংশে ক্ষতি করেছে। সাংবাদিকতার জন্য চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক কোন ভীত নেই। কিসের উপর দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতা করবো। তারপরও সাংবাদিকতা হচ্ছে নিরন্তর লড়াই, এটা চালিয়ে যেতে হবে।

ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, গণমাধ্যম যদি তোষামদ না করে তাহলে গণতান্ত্রিক সাংবাদিকতার সাথে রাষ্ট্রের বৈরি সম্পর্ক থাকবে। তিনি বলেন, সংবিধানে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি প্রকাশ করতে দেয়া না হয়? বাংলাদেশের ৫০ বছরে যে সরকারই এসেছে প্রত্যেকটা সরকারই বাধা দিয়েছে। গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতা একটি অপরটির পরিপূরক মন্তব্য করে নূরুল কবির বলেন, গণতন্ত্র সঙ্কটজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। যৌক্তিক সমালোচনা করলে এখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। স্বাধীনতার দাবি করলে যখন মামলা হয়, তখন তাদের কাছে নত হওয়া মানে দাসত্ব করা। আমাদের আরও সংঘবদ্ধতার দরকার। সাহসী সাংবাদিকতার দরকার। তিনি বলেন, চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দাসত্ব করবো নাকি স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা অনুসারে নাগরিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র পরায়ন সাংবাদিকতায় নিজেদেরকে উন্মোচিত করবো।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, একটা কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ব্যবস্থা যখন প্রবলভাবে দেশ শাসন করছে, তখন গণমাধ্যম কীভাবে স্বাধীনতার চর্চা করবে? তিনি বলেন, যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হল, তখন আমরা সম্পাদকরা মানবন্ধন করেছিলাম। সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। প্রেস কাউন্সিল ও তথ্য কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা কপা শ্যামল দত্ত বলেন, অকার্যকর প্রতিষ্ঠান থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং দীর্ঘ ৫০ বছরে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা, ত্যাগ ও অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি প্রফেসর সাখাওয়াত আলী খান ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে যখন কাজ করবে তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখন দেখা যায় কোন কোন সময় সাংবাদিকরা রাজনৈতিক দলের সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হয়। সংবাদপত্রগুলোও যেন রাজনৈতিকভাবে দলীয় হিসেবে চিহ্নিত না হয়। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এছাড়া সাদামাটা সংবাদ দিয়ে এখন টিকে থাকা যাবে না সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন।

সম্পাদক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন-দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন