বাংলাদেশের সংবাদিকরা কাজের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে যে আক্রমণ ও বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সম্পাদক পরিষদ।
সোমবার (০৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আজ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে বা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস । এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ' জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ ’ বা ‘ ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা '। ডিজিটাল নজরদারি এবং আক্রমণের মুখে সাংবাদিকতা আজকের দিনে বিশ্বজুড়ে যে হুমকি মোকাবেলা করছে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে । ইউনেসকোর ডিরেক্টর জেনারেল অড্রে অ্যাজোলে এ দিবস উপলক্ষে বলেছেন , ডিজিটাল যুগের সুযোগ ও ঝুঁকি বিষয়ে আমাদের আরো কাজ করতে হবে । তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের রক্ষা করবে এমন একটি ডিজিটাল ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরির জন্য । ইউনেস্কোর ' থ্রেটস দ্যাট সাইলেন্স : ট্রেন্ডস ইন দ্য সেফটি অব জার্নালিজম ' শীর্ষক পেপার থেকে দেখা যায় , দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল নজরদারি ও হ্যাকিং সাংবাদিকতাকে বিপদগ্রস্ত করছে । ডিজিটাল নজরদারি সাংবাদিকের সংগ্রহ করা তথ্যকে প্রকাশ করে দিতে পারে । এতে তার সোর্সের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে । এমন নজরদারি সাংবাদিকের ব্যক্তিগত তথ্যকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে , যা তার নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে । এ পেপারে উল্লেখ করা হয়েছে , বিশ্বজুড়ে অনলাইনে নিগ্রহ , নজরদারি , হ্যাকিংয়ের মতো ডিজিটাল অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাধীনতা বিঘ্নিত করা হচ্ছে । রাষ্ট্র এবং নন - স্টেট প্রতিষ্ঠান উভয়ই সাংবাদিকদের চাপে ফেলতে এসব ডিজিটাল কৌশল ব্যবহার করছে । বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর ডিজিটাল হুমকির ঘটনা বাড়ছে । বিভিন্ন রাষ্ট্রে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ডিজিটাল নজরদারির পরিধি বৃদ্ধি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে । কোভিড মহামারীকাল থেকে সাংবাদিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে । এ কারণে ডিজিটাল হুমকি থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । এ বছর ২ থেকে ৫ মে উরুগুয়ের পুন্টা ডেল এস্টে শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে গ্লোবাল কনফারেন্স । ' জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ ' প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এ সম্মেলনে ডিজিটাল যুগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা , তথ্যের অধিকার ও গোপনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হবে । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নীতিনির্ধারক , সাংবাদিক , অ্যাক্টিভিস্ট , ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারক , সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ , আইনজীবীরা ডিজিটাল দুনিয়ায় সংবাদিকদের নিরাপত্তা , গণমাধ্যমের কাজের সক্ষমতা ও জনগণের আস্থা বিষয়ে আলোচনা করছেন । সম্পাদক পরিষদ মনে করে , ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । এর মধ্যে যেটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা - সমালোচনা হচ্ছে তা হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন । এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে । অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে এবং অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন । শুধু সাংবাদিক নন , বিভিন্ন ক্ষেত্রের অ্যাক্টিভিস্ট , শিল্পী , লেখকরাও এ আইনে মামলার মুখোমুখি হয়েছেন । শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ , আপত্তি জানিয়েছেন । কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রীও বলেছেন , এ আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার হয়েছে এবং তিনি আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন । মন্ত্রীর বক্তব্য সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগকে যথার্থ বলে প্রমাণ করেছে । ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা ও হুমকি মোকাবেলা করে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের তৈরি করা ২০২১ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২ তম । এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস সাংবাদিকদের কাজ করার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের যে অঙ্গীকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরে , সম্পাদক পরিষদ তার সঙ্গী । একই সঙ্গে এ পরিষদ বাংলাদেশের সংবাদিকরা কাজের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে যে আক্রমণ ও বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন