শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জনস্বার্থ এবং সেবা নিশ্চিতের জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ। এ বিষয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটির অস্পষ্টতা দূর করে স্পষ্টীকরণের জন্য সম্পাদকদের এ সংগঠনটি জোর দাবি জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার সম্পাদক পরিষদের এক সভায় এ দাবি জানানো হয়।

সম্পাদক পরিষদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করায় সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ ২৯টি প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জনসেবা ও পরিসেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যত্যয় ঘটলে এ সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ থাকবে না, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। একই সঙ্গে এই প্রজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম ও জবাবদিহিহীনতাকে উৎসাহিত করবে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বর্তমান সময়ে তথ্য পাবার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে জারীকৃত এই প্রজ্ঞাপনের বিশদ স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে।

উল্লেখ্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বাকস্বাধীনতা ও মুক্তিবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের থেকেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। ইতোপূর্বেও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনীর বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছিল।

সম্প্রতি সাইবার আক্রমণ থেকে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। সাইবার নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ১৫ ধারার বিধান মতে এসব প্রতিষ্ঠানকে সিআইআই (ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার) ঘোষণা করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও রয়েছে। তালিকায় আরও আছে সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডেটা সেন্টার ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইত্যাদি

এতে আইনের ১৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, আইনের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে সময় সময় কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো পরিবীক্ষণ ও পরিদর্শন করবেন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে আইন লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও, কোনো ব্যক্তি যদি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ উল্লিখিত অপরাধ সংঘটন করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবির, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, করতোয়ার সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, এবং সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন