সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী সীমান্তের গারো পাহাড়ে ফের বন্যহাতির তান্ডব শুরু হয়েছে। ওই দুই উপজেলার পাহাড়ী জনপদে গত কদিন যাবত বিচরণ করছে ওপার থেকে নেমে আসা কয়েকটি দলে বিভক্ত প্রায় শতাধিক বন্য হাতির পাল। এতে হাতির তান্ডব আতঙ্কে ঘুম নেই স্থানীয় পাহাড়ী অধিবাসীদের। তারা জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
জানা যায়, ভারতের সীমানাঘেঁষা ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় এমন প্রায় ২০টি গ্রাম রয়েছে, যেগুলোর চারপাশ গারো পাহাড় ঘেরা। কয়েকদিন যাবত ভারত থেকে নেমে আসা শতাধিক বন্যহাতি কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ওইসব পাহাড়ী জনপদে বিচরণ করছে। বন্যহাতির দল সারাদিন পাহাড়ী ঝোপ-জঙ্গলে থাকলেও সন্ধ্যা হলেই নেমে আসছে লোকালয়ে। হামলা চালাচ্ছে বাড়ি-ঘরে। খেয়ে সাবাড় করছে আমন ধান। পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে বিস্তীর্ণ আবাদি জমির ফসল। আর ধ্বংস করছে সবজি খেত। তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে শুরু হয় হাতি ও মানুষের যুদ্ধ। ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির তান্ডব। এখন ওইসব গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ হাতির আতঙ্কে দিন পার করছেন। রবিবার সরেজমিনে গেলে কথা হয় শ্রীবরদী সীমান্তে নেওয়াবাড়ীর টিলা এলাকার অধিবাসী ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা ব্রতীন মারাকের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা পাহাড়ে বসবাস করি। এখানকার প্রায় সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বন্যহাতি খেতের সবজি আর ধান খেয়ে সাবাড় করছে। মাঝেমধ্যে বাড়ি ঘরেও হামলা করছে। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানায় পৃথকভাবে অনেকে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। একই এলাকার কৃষক লাল চান মিয়া বলেন, ‘কষ্ট কইরা বরবটি করছিলাম। বরবটি বিক্রি করছি। এর মধ্যেই হাতি আইয়া ভাইঙা থুইয়া গেছে। অহন ৮ কাঠা (৪০ শতাংশ) জমিতে আমন ধানের চাষ। ধান খেতও পাক ধরছে। কয়দিন পরেই কাটন যাইবু। প্রায় ১৫ দিন যাবত হাতি খেতের পাশে পাহাড়ের ঝোপে আইছে। সন্ধ্যা অইলেই পাহাড় থাইক্যা হাতি নাইমা আয়ে। সবজি আর ধান খেত খাইতাছে। পাহারা দিতাছি। এই ধান খেতটাও যদি হাতি আইয়া খাইয়া যায়, অহন বউ, পোলাপান লইয়া ক্যামনে চলমু।’ স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘আমরা পাহাড়ের বাসিন্দা। ধান আর সবজি চাষ করি। এডা দিয়ে সংসার চলে। প্রতিবছরই ধান পাকলেই হাতি আয়ে। সবজি আর ধান খেত খাইয়া যায়। মেলা ক্ষতি করতাছে। এইবারও মেলা ক্ষতি করছে। অহন বউ পোলাপান লইয়া ক্যামনে চলুম? একই কথা নেওয়াবাড়ীর টিলা ও পার্শ্ববর্তী মালাকোচা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রহুল আমীন, মজনু মিয়া, আলাল মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, দুলাল মিয়া, শাহ আলম, হাছেন আলী, গোলাপ আলী, ফসি মিয়া, ওবায়দুল ইসলাম, আব্দুর বারিক, সাদা মিয়া, মনিরুল ইসলামসহ গারো পাহাড়ের অনেকের। শ্রীবরদী উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ কোহিনুর হোসেন বলেন, আমরা একটি বেসরকারী সংস্থার তথ্য মতে জানতে পেরেছি, এই পাহাড়ে ১৯৯৫ সাল থেকে বন্যহাতির আক্রমণ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শত শত। ক্ষতি হয়েছে বিস্তীর্ণ আবাদি জমির ফসল।
শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, গারো পাহাড়ে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের বসবাস। গ্রামবাসী হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে। তবে এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ জন্য দিন দিন বন্যহাতির তান্ডবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন