সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতী খাতুন। সে উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের হাউসেরহাট গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ে। বাবা পেশায় একজন কৃষি শ্রমিক। এরপরও লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। অল্প বয়সে বিয়ে করার মোটেও ইচ্ছে নেই তার। অল্প বয়সে সংসারের বাড়তি ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছেও নেই জান্নাতীর।
স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষকতা করেই সুশীল মানুষ গড়তে চায় এই কিশোরী। কিন্তু দারিদ্রতা তাদের প্রতিকুল অবস্থানে থাকায় তার সে স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক সময় বাবা মায়ের বাধ্যবাধকতায় বিয়েও ঠিক হয় তার। পাত্রপক্ষও সেজেগুজে চলে আসেন বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু অনড় জান্নাতী। এত কম বয়সে কোনোমতেই বিয়ে করবে না সে। বিয়ের পিড়িতে বসে বধূ সেজে নিজেকে সাময়িক রঙিন করার থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে জীবনকে রঙিন করতে চায় এ কিশোরী। তাই নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙে দেয় এক সময়। এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে জান্নাতী। স্বপ্নের শীর্ষ চুড়ায় উঠতে চায় সে।
এমন স্বপ্ন জান্নাতীসহ আরও ৬ কিশোরীর। তারাও ঠেকিয়েছে নিজের বাল্য বিয়ে। এদের কেউ দশম শ্রেণিতে কেউ নবম শ্রেণিতে, আবার কেউ দেবে এসএসসি পরীক্ষা। তবে কারোরই ইচ্ছে নেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার। তাদের প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠত হতে চায় নিজ নিজ যোগ্যতায়।
এ বিষয়ে কথা হয় ভিতরবন্দ ইউনিয়নের হাজীপুর এলাকার আবুবক্কর সিদ্দিকের মেয়ে মিনু আক্তারের সাথে। ভিতরবন্দ জেডি একাডেমীর দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। এমন সময় বাড়ি থেকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে পরিবারের লোকজন। কিন্তু বিয়ে করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় মিনু। প্রতিবাদ করে ঠেকায় নিজের বাল্য বিয়ে।
কোনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা যোগ্য কোনো পাত্র পেলে বিয়ে করবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মিনু জানায়, যার যার যোগ্যতা তার তার কাছে। আমি আমার নিজ যোগ্যতায় বড় হতে চাই। কারও উপর নির্ভরশীল হতে চাই না।
একই কথা বলেন গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও পূর্ব সরকারটারী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা, গোপালপুর মন্ডলটারী গ্রামের কোরবান আলীর মেয়ে ও নেওয়াশী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আলেয়া খাতুন, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের শামছুল আলম সরকারের মেয়ে ও বেরুবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সীমা খাতুন, রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ এলাকার খায়রুল আলমের মেয়ে ও নাখারগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী খালেদা খাতুন এবং রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ইদ্রিস আলীর মেয়ে ও রায়গঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইশফা খাতুন।
করোনাকালীন সময়ে নিজের বাল্য বিয়ে নিজেই ঠেকানোয় সাহসী এই সাত কিশোরীকে সম্মাননা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য জাকিয়া সুলতানা বুবলীর অর্থায়নে এবং সিডা ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায়, আরডিআরএস বাংলাদেশ বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস (বিবিএফজি) প্রজেক্টের সার্বিক সহযোগিতায় সোমবার (১ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে জাতীয় যুব দিবসের একটি অনুষ্ঠানে মেয়েশিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এ সম্মাননাসহ শিক্ষা উপকরণ, নগদ অর্থ ও মনিষীদের বই উপহার দেয়া হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর আহমেদ মাছুম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনা বেগম, যুব উন্নয়ন অফিসার মনজুর আলম, বিবিএফজি প্রজেক্টের উপজেলা সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে জাকিয়া সুলতানা বুবলী বলেন, যাতে কিশোরী মেয়েরা পরিবারে, সমাজে ও প্রতিষ্ঠানে সুরক্ষিত থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে এবং নিজেদের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে উৎসাহী হয় সেদিকটা বিবেচনা করে তাদেরকে এ উপহার দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন