রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দারিদ্র্যের কষাঘাতে স্কুল ছেড়ে বেছে নিয়েছে শ্রমিকের কাজ

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় দিন দিন শিশু-কিশোর শ্রমিকের সংখ্যা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভাবের তাড়নায় এলাকার শত শত শিশু বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এসব শিশু স্কুল ছেড়ে বিভিন্নভাবে শ্রম বিক্রি করে রোজগার করছে। গত ১০ অক্টোবর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ শিশুসহ স্বল্প বিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন পেশায় কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকানির্বাহ করছে। এসব শিশুর অধিকাংশের বয়স ৭ থেকে ১৫ বৎসর। যে বয়সে বই, খাতা, কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সে সময় শিশুরা জঠরের তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করছে। পিতা-মাতার অভাবী সংসারে সামান্যতম হলেও সাহায্য করছে। উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ভাই ভাই অটোজ মোটর গ্যারেজে কর্মরত উপজেলা সদরের সরদারপাড়ার নূর ইসলাম বুদার পুত্র আলম (১৩), জিয়ানগর ইউনিয়নের বরিয়া গ্রামের আবদুল মান্নানের পুত্র সজিব হোসেন (১৫), গাজী মোটর গ্যারেজে কর্মরত কুন্দপাড়ার হেলাল উদ্দিনের পুত্র আবদুল মোমিন (১১), মৌ প্লাজা রাশমুরি ফুট গ্যালারিতে কর্মরত আটগ্রামের হাবিল উদ্দিনের পুত্র মাসুদ (১১) জানায়, তারা স্কুলে লেখাপড়া করত। কেউ পঞ্চম শ্রেণী, কেউবা দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তাদের লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাসহ সমাজের আট দশটি শিশুর মতো লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু পরিবারের দৈন্যদশা, অভাব অনটন ও বাবার বৈরী মনোভাবে তাদের সে আশা-আকাক্সক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। দরিদ্রতার কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। এখন তারা শিশু শ্রমিক। শিশু শ্রমিক সজিব হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০০ টাকা করে মোটরসাইকেলের মেকারের দোকান থেকে রোজগার করে। গত ৫ বছর যাবৎ সে পেশায় জড়িত রয়েছে। শিশু শ্রমিক আলম জানান, তার পিতা অটো ভ্যানচালক। ২ ভাই ১ বোনের সংসারে তার বাবার আয় দিয়ে সংসার কোনো রকমে চলে। সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আনতেই সে এই মোটরসাইকেল গ্যারেজে মেকারের কাজ নিয়েছে। ১ বছর যাবৎ সে এ কাজ করে যাচ্ছে। এরা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ওয়েন্ডিং ওয়ার্কসপ, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মিল কারখানাসহ বিভিন্ন মুদির দোকানে ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব শিশু শ্রমিকের কাজ করছে। তাদের অনেকেই আবার নায্য প্রাপ্ত থেকে বঞ্চিত। অর্থলিপ্সু মালিকরা এসব শিশুর নায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে অর্থের পাহাড় গড়ছে। এদিকে দরিদ্রতার কষাঘাতে পরাজিত হয়ে ক্রমান্বয়ে শিশু-কিশোর শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারিভাবে প্রাথমিক স্কুলসহ হাইস্কুলগুলোতে দিন দিন ছাত্ররা দারিদ্র্যের কারণে ঝরে পড়ছে। এদের প্রত্যেকের আশা বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। কিন্তু দরিদ্রতা সে আশার কপালে পানি ঢেলে দিয়েছে। যদি এদের দরিদ্রতা বিমোচন করে এদেরকে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো না কোনোভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় তবে যেমন উপকৃত হবে শিশু-কিশোরসহ তাদের অভিভাবক এবং উপকৃত হবে দেশ ও জাতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন