বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ব্যাহত আমদানি-রফতানি

চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি ডিপোতে জটের শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

পরিবহন ধর্মঘটের গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি প্রধান সমুদ্র বন্দরে জটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্ধ রয়েছে পণ্য ও মালামাল পরিবহন। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন কার্যত ফাঁকা। দেশের অন্যতম বাণিজিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জে নেই প্রাণ চাঞ্চল্য।

গতকালও চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো কন্টেইনার আনা নেওয়া করা যায়নি। মহানগরী এবং আশপাশের ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে পণ্য আনা নেওয়া হয়েছে সামান্য। এতে উদ্বিগ্ন বন্দর ব্যবহারকারীসহ আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টরা। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আমদানি-রফতানি ব্যাহত হবে। আর তাতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তারাও এর শিকার হবেন বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, লরিসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ও কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। গতকালও পণ্য পরিবহনের জন্য সকাল ৬টার পর কোনো ট্রাক-লরি বন্দরে প্রবেশ করেনি ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বন্দরে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক আছে। তবে ধর্মঘটের কারণে কোনো ডেলিভারি হচ্ছে না। বেসরকারি ডিপো থেকে কোনো কন্টেইনারও বন্দরে আসছে না। ধর্মঘট চলতে থাকলে সামনে কন্টেইনার জট দেখা দিতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস। গতকাল আমদানি-রফতানি মিলিয়ে কন্টেইনার ছিল ৩৬ হাজারের মতো। জানা গেছে গতকাল বন্দর থেকে ১৫শ’ টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারি হবার কথা। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাতেগোনা কিছু কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে।

সাধারণ সময়ে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজারের মতো। ধর্মঘটের কারণে ডেলিভারি না হওয়ায় হ্যান্ডলিংও কমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলোতে বর্তমানে জাহাজ রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে নয়টি কন্টেইনারবাহী, চারটি সারবাহী, দুটি সিমেন্ট ক্লিংকার এবং দুটি খাদ্যপণ্য বোঝাই জাহাজ। এছাড়া বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে অবস্থানরত ৪৪টি মাদার ভ্যাসেলে কাজ চলছে। বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে রফানিপণ্যের কন্টেইনার আসছে না বন্দরে। এ কারণে বেশকয়েকটি জাহাজ খালি বসে আছে। এতে করে জাহাজের মাশুলও বাড়ছে।

চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপো থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের মতো কন্টেইনার বন্দরে যাওয়া-আসা করতো, যা ধর্মঘটের কারণে কমেছে। ডিপোগুলোতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। সেখানে রয়েছে ৫২ হাজারের মতো। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে, ডিপোতেও কন্টেইনার জট হবে। তাতে আমদানি রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কাঁচামালের অভাবে শিল্প কারখানার উৎপাদনের চাকাও বিকল হয়ে যাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে। টানা ধর্মঘটে সার্বিক ব্যবসা, বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হন কর্মজীবী মানুষ। কল কারখানা এবং স্কুল কলেজ, মাদরাসা খোলা থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরও বিপাকে পড়তে হয়। সকালে নগরীর কয়েকটি রুটে কিছু বাস চলাচল করে। তবে পরিবহন শ্রমিকেরা কয়েকটি এলাকায় এসব যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। তারা ব্যক্তিগত যানবাহন এবং রিকশা অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দেয়। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আজ রোববার সকাল থেকে সিটি সার্ভিসের বাস চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। ইনকিলাবকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি বলেন, আমাদের সমিতির অধীন বাসগুলো আগামীকাল (রোববার) সকাল থেকে আবারও চলাচল করবে। আমরা দাবি আদায়ে ধর্মঘট পালন করছি। কিন্তু এতে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। আবার একটি মহল পরিবহন শ্রমিকের ব্যানারে রাস্তায় নেমে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল এবং অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিচ্ছে। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এর সাথে আমরা নেই। আমরা বাস চালাবো।

পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সকালে নগরীর টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, একে খান মোড়সহ নগরীর কয়েকটি এলাকায় রাস্তায় নামে পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা ইপিজেডের শ্রমিকবাহী বাস ছাড়াও সিটি বাস, কার্ভাড ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি এমনকি রিকশা অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দেয়। পরে র‌্যাব-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নগরীর প্রতিটি মোড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। কোন কোন রুটে দুই একটি বাস আসতেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন অফিসমুখি লোকজন। বাস, টেম্পু বন্ধ থাকায় রিকশা, অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলেনি যানবাহন। এতে অনেকে হেঁটে কর্মস্থলে যান। বেশি দুর্ভোগে পড়েন মহিলা ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। নগরীর বেশির ভাগ সড়কে ছোট যানবাহনের দাপট। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সড়কে কিছু ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান চলাচল করতে দেখা যায়। গন্তব্যে যেতে লোকজনকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়। এতে চরম বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন