সিলেটে সোমবার (২২ নভেম্বর) ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের ‘কঠোর ধর্মঘট’ পালনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। আজ রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। আজ বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন। জানা যায়, সিলেটে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। সেই সময় শেষ হয় রোববার। কিন্তু তাদের ৫ দফা দাবি আদায় হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। ফলে সোমবার থেকে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা। সোমবার ভোর ৬টা থেকে সিলেট বিভাগজুড়ে কোনো ধরনের গাড়ি চলতে দিবেন না হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। জানা গেছে, ধর্মঘট সফলের লক্ষ্যে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ে গত ৩ দিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। পরিবহন নেতারা ৫ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিভিন্ন জেলা-উপজেলার শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের তাগিদ দিয়েছেন তাদের।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে- সিলেট জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা চালক শ্রমিক জোট (রেজি নং: ২০৯৭)-এর ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, ‘প্রহসনের নির্বাচন’ ও ‘বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায়’ ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবত আদায়কৃত সকল টাকা ফেরত প্রদান, সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দফতরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং: বি-১৪১৮) নেতৃবৃন্দের উপর দায়েরকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহার, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরাণ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশসহ সকল প্রকার গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা করা। সিলেটের সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলছেন- এসব দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। বার বার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পরে প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে সমাধানের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন তারা। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় এবার তারা সকল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জোটকে নিয়ে দেশের শীর্ষ পরিবহন সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের ব্যানারে কঠোর কর্মসূূচি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে সিসিক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করা হয়। পরিববহন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সিসিক মেয়রের মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সিসিকের ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী সিসিকের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদেরকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু সময়মতো আপোষনামা প্রস্তুত না হওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে সিসিকের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। ফলে ভেস্তে যায় আপোষের উদ্যোগ। এ সময়ের মধ্য পরোয়ানাভুক্ত আসামিগণ আদালতে হাজির না হওয়ায় সম্প্রতি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এর মধ্যে গত শুক্রবার সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ওমরাহ পালনে সৌদি আরব চলে যাওয়ায় সংকট আরো ঘনীভূত হয়। শেষ পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তে আন্দোলনের দিকে ঝুকঁছেন পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পূর্ব-ঘোষিত ধর্মঘটকে সামনে রেখে আজ দুপুরে অনুষ্টিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির জরুরি সভায় ধর্মঘট সফলে করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এবার কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াবেন না তারা। এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা। সোমবারের (২২ নভেম্বর) পরিবহন কর্মবিরতি বাস্তবায়নে আমারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। এ লক্ষ্যে আজ (রবিবার) দুপুর ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সেই সভায় পরিবহন কর্মবিরতি সফলে করণীয় নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ৫ দফা দাবিতে আমরা প্রশাসনের বরাবরে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল। সিসিক কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে। আমরা স্মারকলিপিতে বলেছিলাম- ২১ নভেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে ২২ নভেম্বর থেকে শুধু সিলেট জেলা নয়, গোটা বিভাগে সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাবে। এখনে এ পথে দাবী আদায়ে মাঠে নামছি আমরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন