সমাবেশ বানচালে পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছে
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বিভাগজুড়ে গায়েবী মামলা, গ্রেফতার হুমকি-ধামকি, পথে পথে বাধা চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের তল্লাশি, গাড়ি থামিয়ে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব কিছু পরোয়া না করে বিএনপির আগামীকালের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসছেন নেতাকর্মী-সমর্থকরা। সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠে হলেও সেটি এখনো পুলিশের দখলে। পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মাঠে ঠাঁই নিয়েছে মানুষ। গত বুধবার রাত থেকে মানুষ আসছে। সারা রাত মানুষ এসেছে। এখনও অব্যাহত রয়েছে। নৌকায় পদ্মা নদী পেরিয়ে মানুষ আসতে দেখা যায়। গতকাল বৃস্পতিবার সকাল এগারোটায় মাদরাসা মাঠ এলাকা ঘুরে দেখা যায় মাঠে পুলিশ বসে আছে। আশপাশে ও ঈদগাহ মাঠে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। এ যেন ইজতেমা মাঠ। তাবুর সামনে নিজ নিজ জেলার কর্মীদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খাবার বলতে চাল ডালের সাথে সবজি মিলিয়ে খিচুড়ি। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগা থেকে আসা লোকজন বলেন, তাদের রাজশাহী আসতে অনেক বাধা পেরুতে হয়েছে। নওগা থেকে আসা কর্মীদের তাবুতে দেখা গেল ক’জন কাফনের কাপড় পড়ে বসে আছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন এ সরকারের দুঃশাসনে এমনিতে মরে গেছি। এদের সরাতে মরণপন করে এসেছি। মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক নগর সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল হক মিলন ও বগুড়া বিএনপির সভাপতিক ও মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। পদে পদে বাধার ফিরিস্তি দিতে গিয়ে এদের মুখে ক্ষোভ ঝড়ে পড়ছিল। বুলবুল বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে সমাবেশ ঘিরে সরকারের এমন নোংরা খেলা আর দেখিনি। সরকার পুরো প্রশাসন ব্যবহার করছে বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে। হোস্টেলে মেসে এমনকি বাড়িতে বাড়িতে বাইরে থেকে আসা লোকজনদের ঠাঁই না দিতে মাইকিং পর্যন্ত করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত এমনটি চলছে। অ্যাড. শফিকুল হক মিলন বলেন সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট হবে। এটি মাথায় রেখে মোহনপুর, তানোরসহ আশে পাশের উপজেলা থেকে রাতে বাসে করে রওনা হলেও তাদের পথে পথে পুলিশী বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাতে পুলিশের তল্লাশী চৌকিতে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে বাধার সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে রাত তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসেন।
বগুড়া বিএনপির সভাপতি ও মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগজুড়ে পুলিশকে ব্যবহার করছে। ড্যাবের সাবেক সেক্রেটারি ডা. মোফাখারুল ইসলাম নিজ গাড়ি নিয়ে মাদরাসা মাঠের পাশে যেতে চাইলে পুলিশের ব্যারিকেটের মুখে পড়েন। মাঠের পাশ্ববর্তী রাস্তাটিও পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রেখেছে। তিনি যেতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়। এনিয়ে খানিকটা বাকবিতÐা হয়। পরে তার গাড়ি ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সমাবেশে আসা লোকজনদের চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র করব। সেজন্য মাঠের দিকে গিয়ে এমন বিড়ন্বনায় পড়তে হলো।
শিক্ষা নগরী রাজশাহী এখানে বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে আসে লাখ খানেক শিক্ষার্থী। তাদের বেশিরভাগ থাকে ছাত্রাবাস ছাত্রীনিবাসে। সেখানেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বাইরের কেউ যেন না থাকে এমনকি স্বজনরা। বসবাসরতদের তালিকা নেয়া হয়েছে। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক আর ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মটর সাইকেল আর অটোরিক্সার যাত্রীদের তল্লাশি আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, এমন দুঃসহ পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কর্মকান্ড দেখে মনে হয় সমাবেশ বানচালের জন্য পুলিশকে দলীয় ক্যাডার হিসাবে মাঠে নামানো হয়েছে। অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে তারা কোন হয়রানি করছেন না। জানমালের নিরাপত্তা আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কাজ করছেন।
রাজশাহী বাস টার্মিনাল ও ঢাকাগামী বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ কোন বাস ছেড়ে যায়নি। বাস চলাচল পুরো বন্ধ রয়েছে। মাইক্রোবাস ও কার স্ট্যান্ডগুলোতে সব গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে তারাও যেতে রাজী হচ্ছে না ভয়ে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন