চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় পানের ছত্রাকজনিত কাণ্ড পঁচা ও পাতা পঁচা রোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পান চাষিরা। উৎপাদন খরচ এবং পরিশ্রম বেশি হলেও দাম ভাল পাওয়ায় উপজেলায় দিনদিন পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ বছর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, কাণ্ড পঁচা, পাতা পঁচা রোগের সংক্রমণে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া হরিণাকুণ্ডের সস্তা ঝালপান বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় পানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে জানান স্থানীয় পান চাষিরা। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন পান চাষিরা।
জানা যায়, উপজেলার আধুনগরের কুলপাগলি, বড়হাতিয়ার চাকফিরানী, পশ্চিম চুনতি, পানত্রিশা, সাতগড়, নারিশ্চা, পুটিবিলা ও কলাউজানের পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক পান চাষ হয়। চলতি মৌসুমে এসব এলাকায় ৩২ হেক্টর জমিতে পানের বরজ করা হয়েছে। প্রত্যেক বরজে সারি সারি পানের লতা। খুঁটিতে প্যাঁচানো পানের লতায় ধরেছে প্রচুর পান। ইতোমধ্যে পানের আকারও বড় হয়েছে। পানগাছ লাগানোর ছয় মাসের পর থেকে ফলন পাওয়া যায়। প্রতি মাসে তিনবার পান তোলা হয়।
উপজেলায় প্রায় চার শতাধিক পান চাষি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ জন পান চাষি আছে আধুনগরের কুলপাগলি এলাকায়। লোহাগাড়ায় মিষ্টিপান, গাছপান ও বাংলাপানের চাষ হয়ে থাকে। গাছপান চাষ অধিক লাভজনক। এই জাতের পান সাইজে একটু বড় হয় কিন্তু এবছর কাণ্ড পঁচা, পাতা পঁচা (স্থানীয় চাষিদের ভাষায় চাক্কা ও জালি রোগ) রোগের কারণে চাষিরা এই জাতের পান চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে মিষ্টি পান লাভজনক হলেও পরিশ্রম ও খরচ বেশি।
সচরাচর বড় সাইজের প্রতি বিড়া পান (৬০ গণ্ডা) ৩৫০ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে বড় সাইজের প্রতি বিড়া বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ টাকা। ছোট সাইজের প্রতি বিড়া পানের দাম ৬০ টাকা। পানবরজ থেকে পান তোলে আনা ও বিড়া বানাতে প্রতি বিড়ায় খরচ হয় ৩০ টাকা। এছাড়া পানগাছের প্রতিটি আগা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে পানের চারা রোপনের পর অতিবৃষ্টি, কাণ্ড পঁচা ও পাতা পঁচা রোগের সংক্রমণে পানের বরজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান পানচাষিরা। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে হরিণাকুণ্ডের সস্তা ঝালপান ও ভেড়াপানের সহজলভ্যতার কারণে পানের ন্যায্যমূল্য না হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।
আধুনগরের কুলপাগলি এলাকার পানচাষি মো. নুরুল কবির বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। মিষ্টি পান ও বাংলা পানের দুইটি বরজে ২৮ হাজার পান চারা রয়েছে তার। খরচ হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ৯০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। লোহাগাড়ায় উৎপাদিত পান কেরানীহাট, হাটহাজারী, বহদ্দারহাট ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টি, কাণ্ড পঁচা ও পাতা পঁচা রোগের কারণে পানের বরজ প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া হরিণাকুণ্ডের সস্তা ঝালপানে বাজার সয়লাভ হয়ে গেছে। তাই তাদের উৎপাদিত পানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
সরকারিভাবে পান রূপ্তানির উদ্যোগ নিলে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন। অন্যান্য ফসলের মতো পান চাষিদের ভর্তুকী ও অল্প সুদে ঋণ সুবিধার দাবি করেন তিনি। তাহলে স্থানীয় চাষিরা পান চাষে আরো মনযোগী হবেন।
একই এলাকার আরেক কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, আমার ৭টি পানের বরজে ৩৫ হাজার চারা আছে। প্রতিদিন বরজগুলোতে ১৪-১৫ জন লোক কাজ করে। পানের বরজে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। গত সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার বাংলা পান ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে হয়েছে। পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবছর তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছরওয়ার মোঃ আলম জানান, অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার শতকরা ১০ ভাগ পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টি, দূষিত পানি ব্যবহার, অতিমাত্রায় গোবর, জৈব সার ও ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে পানে কাণ্ড পঁচা ও পাতা পঁচা রোগ হয়ে থাকে। নিরাপদ ও রোগমুক্ত পান উৎপাদন করতে পরিমিত মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার ও পানের বরজে যথাযথ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, লোহাগাড়ার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এবছর লোহাগাড়ায় ৩২ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। অন্য এলাকার পান বাজারে আসলে স্থানীয় পানের একটু কমে যায়; তবে এটা সাময়িক।
নিয়মিত ও সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে পান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়। পুকুর, খাল বা বিলের পানিতে পান পরিষ্কার না করে টিউবওয়েলের পানিতে পরিষ্কার করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন