শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি বিশ্বজনীন সমস্যা

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৫ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

আব্দুল ওদুদ
জঙ্গি দমন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, জঙ্গি দমনে যতটা প্রয়োজন সরকার ততটাই কঠোর হবে। দেশে জঙ্গিবাদের দানব যখন তার ভয়াল থাবা বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তখন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সময়োচিত এবং বিশেষ তাৎপর্যের দাবিদার। সব সম্ভবের এই দেশে অতীতে সরকারিভাবেই জঙ্গিবাদকে মদদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দল বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করতে জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করার বিষয়টি একসময় ওপেন সিক্রেট বলে বিবেচিত হতো।
প্রধানমন্ত্রী সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেছেন, তিনি নিজেও গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছেন। বলেছেন, এ ধরনের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসীদের যারা সৃষ্টি করে গেছে, একবার বীজ বপন করলে তা সহসা উৎপাটন করা যায় না। তার পরও শত বাধা ডিঙিয়ে হলেও তার সরকার জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়বে। প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন যখন গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলা সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব।
শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলামের নামে মাহে রমজানে জঙ্গি নামের নরপিশাচরা গুলশানে যে পৈশাচিক হত্যাকা- চালিয়েছে তা কলঙ্কজনক ঘটনা। ইসলাম তথা দেশের স্বার্থে বিদেশি অপশক্তির এসব প্রতিভূকে ঠেকানো এবং বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা সরকার তথা সব নাগরিকের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম অর্থ শান্তি। যে ধর্ম সব ধরনের সন্ত্রাস এবং অন্যায় রক্তপাতকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সে ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস চালায় তারা হয় মস্তিষ্ক বিকৃতিতে ভুগছে, নতুবা নিজেদের বোধশক্তিকে কারও কাছে বন্ধক রেখেছে। গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলায় প্রমাণ হয়েছে জঙ্গিদের সিংহভাগ মগজ ধোলাই কিংবা মাদকাসক্তির শিকার হয়ে এই ঘৃণ্য পথে পা বাড়িয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ অংশকেই জঙ্গিরা তাদের অশুভ উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইসলামের অপব্যাখ্যা করে তাদের হাতে তরবারি, আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড তুলে দিচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে সে সত্যটি তুলে ধরতে হবে। এ বিষয়ে দেশের আলেম সমাজ, বিশেষ করে মসজিদের ইমামদের এগিয়ে আসতে হবে। বিপথগামীদের সঠিক পথে আনতে সেটিই হতে পারে যথার্থ পথ।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এ মুহূর্তে একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। এই ঘৃণ্য আপদ বিশ্বশান্তির জন্য ইতিমধ্যে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অপচর্চা বেশ কিছু দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও তা বিসম্বাদ সৃষ্টি করে চলেছে। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এই জঘন্য আপদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের প্রাসঙ্গিকতাকে স্বীকার করে বিশ্বস্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে বাংলাদেশ।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের এ অবস্থান বিশ্ব শান্তি এবং সব জাতির সহঅবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করার যৌক্তিক প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অপচর্চা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও তা প্রতিটি ধর্মীয় মতবাদের মূল চেতনার পরিপন্থী। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম শান্তি ও মানবতার পক্ষে। প্রতিটি ধর্ম সন্ত্রাস ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে তার অনুসারীদের সতর্ক করে দিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপাসকরা নিজেদের মতলব হাসিলের জন্য ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধের যে দূরতম সম্পর্কও নেই তা সহজে অনুমেয়। এ বিপদের বিরুদ্ধে বিশ্ব সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের যে আহ্বান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সব দেশের বিবেচনায় আসবে এমনটিই কাক্সিক্ষত।
আমাদের এই গ্রহকে শান্তির গ্রহে পরিণত করতে চাইলে, এ গ্রহের ৭০০ কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মানকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে চাইলে এ প্রয়াসের প্রতি বিঘœ সৃষ্টিকারী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উপাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো অস্তিত্ব সংকটে আছে। তাদের কর্মকা- নিষিদ্ধ। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক মতপার্থক্যের সুযোগ নিয়ে সংগঠিত হয়ে তারা সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যখন একটি রাজনৈতিক পক্ষ সরকারকে নিজেদের প্রতিপক্ষ মনে করছে তখন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান আরো সহজ হয়।
এ অবস্থায় সরকারকেই দায়িত্বশীল ও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে গোয়েন্দা বিভাগকে। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সংগঠিত হওয়ার আগেই তাদের নিষ্ক্রিয় করতে হবে। জঙ্গিদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ভেঙে দিতে পারলে তাদের মনোবলও ভেঙে যাবে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দিক থেকেও নানা কার্যক্রম নিয়ে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ব্যবহার করতে হবে মিডিয়াকেও। গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা। জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে জঙ্গিবাদ কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে সরকার ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা গেলে জঙ্গি সংগঠনগুলো তৃণমূল পর্যায়েই কার্যকারিতা হারাবে। জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি উত্থান রুখতে হবে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্ব বারবার জানান দিচ্ছে। আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার একাধিক চেষ্টা অতীতে দেখেছি। ছায়ানট, উদীচীসহ মুক্তচিন্তার চর্চাকারী সংগঠনগুলোর অবকাঠামোতে কাপুরুষোচিত হামলার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তচিন্তামনা বিভিন্ন ব্যক্তির হত্যাকা-ও আমরা দেখেছি। তবে রয়েছে বিচারপ্রক্রিয়ায় ধীরগতি। এই দুর্বলতা কাটাতে হবে। প্রয়োজনে সন্ত্রাসবাদবিরোধী বাহিনী গঠন ও জঙ্গিদের দ্রুত বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
আমি মনে করি, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ শুধু সরকারের সমস্যা নয়, সমাজের সমস্যা। সমগ্র দেশবাসীর সমস্যা। এ সমস্যা প্রতিরোধে ঘরের মা-বোন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ের মা-বোনদেরকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের প্রথানমন্ত্রী যথেষ্ট ধার্মিক এবং প্রিয় ধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় তিনি আন্তরিক। তার নিকট ধর্ম নিরাপদ। কাজেই তাকেই আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে হবে।
জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। বিদেশীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। গ্রামে-গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায় মহিলা মাহফিল করে নারীদের বিভ্রান্ত করছে। দেশের মা-বোনদের দেওয়া চাঁদার টাকায় তারা অস্ত্র কিনে ব্যবহার করছে। তাই জামায়াতকে যারা মদদ দেয় তাঁদের চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করতে হবে। জঙ্গিবাদের প্রসারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক যেসব অপশক্তি ভূমিকা রাখে, সেগুলোতে আঘাত হানতে হবে।
ষ লেখক : সংসদ সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও সাধারণ সম্পাদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন