শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সবজি গ্রাম আকন্দপাড়ায় পেঁপে চাষে ইন্নার সাফল্য

একের ভেতর তিন, হাজারো যুবক স্বাবলম্বী

প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আল আমিন ম-ল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে

বগুড়ার গাবতলী নেপালতলীতে শীতকালীন সবজি চাষের পাশাপাশি এবারে পেঁপে চাষে সাফল্য এনেছেন আদর্শ কৃষক ইন্না প্রাং। সে পেঁপের জমিতে বেশি লাভের আশায় চাষ করেছে আদাসহ ওলকচু সবজি। বয়স যখন ২৫ বছর তখন থেকে যুবক ইন্না প্রাং কৃষি কাজ করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ইতোমধ্যে সে মরিচ, টমেটো, পটল, ফুলকপি, শিম চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। গত ৫ বছর যাবত তিনি উন্নত জাতের শাহী পেঁপে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তার পেঁপে ক্ষেত ও কলাকৌশল দেখে গাবতলীর প্রায় হাজারো শিক্ষিত বেকার যুবকেরা পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ইন্না নেপালতলী ইউনিয়নের ডি-ডওর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র। এবছরে সে ৭০ শতক জমিতে উন্নতজাতের দেশীয় শাহী পেঁপের চাষ করেছেন। পেঁপের চারা, সার, ওষুধ, শ্রমিকসহ ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। পেঁপে বাগান দাম হয়েছে ৩ লাখ টাকা। তবুও সে পেঁপের বাগান বিক্রি করেননি। ন্যায্যমূল্য পেলে ৪ লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রি হবে। তবে চুরির হাত থেকে ফলন রক্ষা করার জন্য তিনি জমিতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ইন্নার এই সাফল্যের পেছনে গাবতলী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। এমনকি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে নেপালতলী ইউয়িনের প্রায় ৫ শতাধিক বেকার যুবকসহ কৃষকরা সারাবছর নানা প্রকার সবজি ও পেঁপে চাষ করছেন। ফলে ঐ এলাকার প্রায় কৃষক এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। একই গ্রামের সবজি চাষী মমিন, সেন্টু, শাহীন, জিয়াউর, ডালিম, রেজা জানান, আমাদের এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের তথ্য-পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতার ফলে আমাদের কৃষিকাজে সফলতা ও সাফল্য এসেছে। এ খবর পেয়ে পেঁপে বাগান দেখতে যান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহেদুর রহমান জাহিদ। পেঁপে চাষী ইন্না প্রাং জানান, ভবিষ্যতে সে একটি কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করতে চান। এছাড়াও এলাকার বেকার যুবকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তিনি পেঁপে চাষের আহ্বান জানান। তিনি প্রতিবেদককে আরো জানান, আমি প্রথমে ৮ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করে লাভ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এরপর গত বছরে ৩৬ শতক জমি থেকে লাভ হয়েছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। এবছরে ৭০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। আশা করছি পেঁপে বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা লাভ হবে। এছাড়াও আমি একই জমিতে ১৮ শতক জমিতে আদা ও ২২ শতক জমিতে ওলকচুর চাষ করেছি। এ দুটি সাথী ফসল থেকে ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। একই এলাকার সফল নারী কৃষক নুরজাহান বেগম ও হোসনে আরা বেগম জানান, আমরা সবাই পুরুষদের কৃষিকাজে সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়াও নোপালতলী আমতলীপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক নুরুল ইসলাম উজ্জল ১ বিঘা, আকন্দপাড়া গ্রামের রতন ২২ শতক, শাহীন ৮০ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছেন। তবে পেঁপে চাষের পাশাপাশি ইতোমধ্যে নেপালতলীর আকন্দপাড়া, ডওর, ডি-ডওর, আমতলীপাড়া, মমিনহাটা, মহিষবাতান ও কাগইলের মীরপুর গ্রাম এখন সবজি গ্রাম হিসাবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইন্না একজন আদর্শ কৃষক। কৃষি অধিদফতর সবসময় তাকে সহযোগিতা করে আসছে। ফলে নেপালতলী ইউনিয়নে পেঁপে চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সোহরাব হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁপে চাষ লাভজনক। ইন্না তার দৃষ্টান্ত। এজন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার আ.জা.মু. আহসান শহীদ সরকার জানান, পেঁপে চাষে লাভ বেশি। কৃষকদের পেঁপে চাষে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের তথ্য ও পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করছি আগামী দিনে পেঁপে ও শীতকালীন সবজি চাষ ও উৎপাদন আরো বাড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন