আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সঙ্কটের কারণে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এ দুটি ঘাটে যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে এবং টার্মিনালে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ফেরি পার হতে আসা এসব ট্রাক গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আরিচা ঘাটে এসে গতকাল শনিবার বেলা দু’টাতেও ফেরি পার হতে পারেনি। ফেরি সঙ্কট, যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি এবং ঘাটে বিশৃঙ্খলার জন্যই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাক চালকরা। এ নৌরুটে আরো ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে আরিচা ঘাট ঘুরে দেখা যায়, ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় এবং টার্মিনালে ফেরি পার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘ সময় লাগছে ফেরি লোড-আনলোডে। আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোনো শৃঙ্খলা নেই বলল্লেই চলে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৪টি ফেরি চলাচল করলেও ফরিদপুর নামের একটি ফেরি শুধু ছোট গাড়ি পার করতে পারে। পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি ডুবে যাওয়ার পর থেকে বাকী অন্যান্য ফেরিও কম সংখ্যক গাড়ি নিয়ে চলাচল করছে। এভাবে কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু ফেরি বাড়ানো হচ্ছে না। যানবাহনের তুলনায় ফেরি না থাকায় প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদেরকে। গাড়িগুলো ফেরি পার হতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদেরকে।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০টি ফেরির মধ্যে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। ফলে এ নৌরুটে ফেরি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রো-রো ফেরি শাহ আলী, ভাষা শহীদ বরকত, বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান নামের চারটি ফেরি মেরামতের জন্য নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। খান জাহান আলী পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় সাময়িক মেরামতে রাখা হয়েছে। আর ডুবে যাওয়া আমানত শাহ উদ্ধার করে পাটুরিয়া ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছে।
ট্রাক চালক মো. আমিন আলী জানান, আরিচা ঘাট এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় কোন শৃঙ্খলা নেই। ফলে যে যার মতো করে গাড়ি পার্কিং করে রাখছে। বিশেষ করে ফেরি লোড-আনলোডের রাস্তায় গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। আরিচা ঘাটে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মতো কোন লোক নেই। যে কারণে ঘাটে ফেরি আসলে এদিক-ওদিক ছুটা-ছুটি করতে হয় গাড়ি চালকরা। এতে নির্ধারিত সময়ে ফেরি পার হতে সমস্যা হচ্ছে।
ট্রাক চালক মো. ছোরহাব আলী বলেন, আমারা পাটুরিয়া ঘাট হয়ে চলাচল করি। কিন্তু ওই ঘাটে সমস্যা হওয়ায় এ ঘাট হয়ে আসি। ফেরি স্বাল্পতার কারণে এখানেও সমস্যা। আমি গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় আরিচা ঘাটে আসি। কিন্তু গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টাতেও ফেরি পার হতে পারিনি। এ নৌরুটে আরো ফেরি বাড়ানোর দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ফেরি কর্তৃপক্ষ আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দূলাহ জানান, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট চালু হবার পর দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। কিন্তু যানবাহনের তুলনায় ফেরি সঙ্কট হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। পার হতে আসা গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ নৌরুটে আরো ফেরি বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন। ফেরি বাড়ালে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ফেরিগুলো অনেক দিনের পুরানো হওয়ায় এগুলো মেরামতের জন্য নারায়গঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। যে কারণে ফেরি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফেরিগুলো আসলেই এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন