মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে হবে

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস (১৭ অক্টোবর) পালন উপলক্ষে মূল অনুষ্ঠান করার জন্য প্রতি বছর এমন একটি দেশকে বেছে নেয়, যে দেশ দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ ছিল তার মনোনীত দেশ। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে আসেন। মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। এবার বাংলাদেশকে বেছে নেয়ায় এটা স্বভাবতই প্রতীয়মান হয়, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে উল্লেখযোগ্য বলেই বিশ্বব্যাংক মনে করে। এটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি, যা ভবিষ্যতে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্বব্যাংক-প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অর্জনের ভূয়সী প্রশাংসা করেছেন। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যকে অসাধারণ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।
শুধু দারিদ্র্য বিমোচনই নয়, অন্য আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনুকরণীয় সাফল্যের উল্লেখ ও প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংক-প্রেসিডেন্ট। তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, স্যানিটেশন সুবিধা, টিকা প্রদান ও শিশু শিক্ষার হার বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেছেন, ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে নারীর কর্মসংস্থান ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে। প্রায় ৪০ লাখ নারী বিশেষত গ্রামের দরিদ্র নারী তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করছে। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ব্র্যাক ও গ্রামীণবাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে ক্ষমতায়িত করেছে। মানুষের জন্য বিনিয়োগ যে অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ শুরুতেই এটা বুঝতে পেরেছে, যার যে ফল পেয়েছে ও পাচ্ছে। দুর্যোগের অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রশামনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগামী অবস্থানে রয়েছে, এ কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, জলবায়ুর দিক থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। কয়েকটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। বিশ্বের ৭০ শতাংশ ঘূর্ণিঝড় এখানেই হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি ও সাফল্য প্রদর্শন করেছে তাতে আগের তুলনায় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার প্রকোপ ও সংখ্যা কমেছে।
দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যেসব ক্ষেত্রের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন) বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সাফল্যের কথা এর আগে আরও অনেকেই বলেছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও নানা সময়ে নানা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে। সেই বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক-প্রেসিডেন্টের মূল্যায়নে নতুনত্ব তেমন কিছু নেই। তারপরও তার কথা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, তিনি বিশ্বব্যাংকের মতো একটি বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান। এসব প্রসঙ্গে তার মূল্যায়ন সাক্ষ্য হিসেবে ভবিষ্যতে উদ্ধৃত হবে। অবশ্য এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই মূল্যায়ন ও প্রশংসাই কি যথেষ্ট? এসব ক্ষেত্রে আমাদের সফল্য ও অর্জন কি আত্মতুষ্ট হওয়ার মতো? মোটেই নয়। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য এসেছে বটে, তবে এও তো নিরেট সত্য যে, এখনো দেশের প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র এবং আরো চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। এর সঙ্গে দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত মানুষের সংখ্যা যোগ করলে দারিদ্র্যকবলিত মানুষের সংখ্যা কত দাঁড়াবে সেটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের জিডিপির আকার এখন ৭ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা রয়েছে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত শ্রেণির হাতে, যাদের সংখ্যা ৫৫ লাখ মাত্র। অবশিষ্ট ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ১৫ কোটি ৫ লাখ লোকের আওতায়। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের সমাজে দারিদ্র্য ও ধনবৈষম্য কতটা প্রকট ও উদ্বেগজনক। এরকম একটি বিষম সমাজ যে দেশে বিদ্যমান, সে দেশের কাক্সিক্ষত জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনই দ্রুতায়িত হতে পারে না। অথচ আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, স্যানিটেশন সুবিধা সম্প্রসারণ, টিকা প্রদান, শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যকে খাটো করে না দেখেও বলা যায়, এসব ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো পর্যায়ে আমরা এখনো পৌঁছুতে পারিনি। এ জন্য অব্যাহত চেষ্টা ও লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। দারিদ্র্য যেখানে জগদ্দল, ধনবৈষম্য যেখানে আকাশ-পাতাল, সেখানে লড়াই চালিয়ে সাফল্য লাভ করা খুবই কঠিন। যদি আমাদের বিজয় ও সাফল্য অর্জন করতে হয়, তবে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে, ধনবৈষম্য কমাতে হবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে, বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে হবে, উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে হবে, দুর্নীতি নিরোধ করতে হবে, জননিরাপত্তা, সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এরকম পরামর্শই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে, অপেক্ষাকৃত ভালো চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে, জ্বালানি ও পরিবহন খাতের উন্নয়নে নজর দিতে হবে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনসহ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অংশীদার হিসেবে কাজ করতে চায়। এমন আশ্বাস তিনি দিয়েছেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে বিশ্বব্যাংক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দারিদ্র্য বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো বিনির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা বিদ্যমান রয়েছে। কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই সংস্থার সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত সংস্থা অর্থায়ন থেকে সরে যায়। তবে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করলেও অন্য অনেক ক্ষেত্রে সহায়তা বহাল থাকে। দুর্নীতির প্রশ্নে বিশ্বব্যাংক বরাবরই সোচ্চার। আমাদের দেশে ইতোপূর্বে সহায়তার অর্থ ব্যবহারে অপারগতা কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত কিংবা ফেরত নিয়ে গেছে, এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে জিম ইয়ং কিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের একচুলও পরিবর্তন হয়নি। এটা আমি বরাবরই বলি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের নীতি হচ্ছে, জিরো টলারেন্স। আমরা এ নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলাম, এখনো সেটা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের মূল অনুষ্ঠান করার জন্য বাংলাদেশকে মনোনীত করা এবং এর সূত্র ধরে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সম্পর্ক মসৃণ ও ঘনিষ্ঠ করতে সহায়ক হবে। বিশ্ব ব্যাংক প্রধানের এই সফর কালে তিন বড় প্রকল্পে অর্থায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর একটি পুষ্টি নিয়ে। আরেকটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক। তৃতীয়টি হলো ট্রাস্ট ফান্ড। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে সেটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে উদাহরণ হিসাবে তুল ধরতে ট্রাস্ট ফান্ড ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও দুর্নীতি মাথা ব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের বিকল্প নেই। অথচ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে, উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে দুর্নীতি অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে দুর্নীতি নেই। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি কার্যত ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ রূপ লাভ করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমের প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওয়েব সাইটে বিশ্বব্যাংকের বরাতে ইংরেজিতে একটি উদ্ধৃতি সংযুক্ত করা আছে, যার বাংলা অর্থ : দুর্নীতি দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে গৃহীত নীতি ও কর্মসূচীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতস্বরূপ। দারিদ্র্য বিমোচনে দুর্নীতি প্রতিহত করা তাই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, দুর্নীতি হ্রাসে দুদকের ভূমিকা মোটেই উল্লেখযোগ্য নয়। এই কিছুদিন আগেও একথা বলা হয়েছে, দুদক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির সনদ বিতরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। খোদ দুদকের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়েও অনেক কথা আছে। তাদের কারো কারো গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাও আছে। দুদককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও নতুন নয়। দুর্নীতি দমন ও নিরোধে যে প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে, তার সম্পর্কেই যদি এ ধরনের নানা অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে দুর্নীতি পরিস্থিতির অবনতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি মানুষ তা সম্যক অবহিত।
বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সফরের প্রায় একই সময়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপার্সন হোসে কারলোস উগাস সানচেজ মোরিনো বাংলাদেশ সফর করেছেন। তিনি তার দুদিনের সফরে বিভিন্ন সংগঠন, পেশাজীবী সম্প্রদায় ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি একটি গণ বক্তৃতা দেন ও সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি টিআই’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি’র আমন্ত্রণে এ সফর করেন। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, টিআই দুর্নীতি ও দুর্নীতিজাত অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং গবেষণা ও প্রচারের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত। বাংলাদেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি সম্পর্কে টিআই’র কোনো কিছুই অজানা নেই। টিআই প্রতিবছর জরিপ চালিয়ে বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিমাপক এবং বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি দেখিয়ে দুর্নীতি ধারণাপত্র নামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। টিআই’র ধারাবাহিক জরিপ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিতে এক নম্বর দেশ। পরবর্তীতে এই অবস্থানের পরিবর্তন ঘটলেও এখনো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের একটি বাংলাদেশ। এটা বরাবরই লক্ষ্য করা গেছে, দুর্নীতি সংক্রান্ত টিআই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই সরকারী মহল তাতে যারপরনাই অসন্তোষ প্রকাশ করে। টিআই’র সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিতের পরও তা লক্ষ্য করা গেছে। সরকারী মহলের এতটা নাখোশ হওয়ার কারণ সম্ভবত এই যে, এতে দায় গিয়ে পড়ে সরকারী মহলের ওপর এবং এই মহলের অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট, এমন ধারণা জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। টিআই’র চেয়ারপার্সন অনেক কথার সঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে গণআস্থা ফেরাতে হলে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তার দ্বিতীয় কথাটি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমরা সরকারের শত্রু নই। আমরা দুর্নীতিবাজদের শত্রু। দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই।
দারিদ্র্য অনেক সময় দুর্নীতির কারণ। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। তবে ‘পেশাদার দুর্নীতিবাজদের’ ক্ষেত্রে এটা খাটে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় উচ্চপদাধিকারী, শিক্ষিত ও সম্পন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরাই অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত। তবে দুর্নীতি যে দারিদ্র্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ তাতে সন্দেহ নেই। দুর্নীতি দরিদ্রকে আরো দরিদ্র করে, দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধান অন্তরায় হিসাবে কাজ করে। এই বাস্তবতায় একই সঙ্গে দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যদি দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে চাই, দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে চাই তবে এই লড়াই এক সঙ্গেই চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং লড়াইয়ের সঙ্গে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন