শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

তফসিলের এক মাস আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে

এ বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ওই তারিখকে সামনে রেখে জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ মাস শেষ হলেই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সিটি নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণা আসতে পারে। তারপর নির্বাচনী গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু তফসিল ঘোষণার এক মাস আগেই মেয়র পদের আগ্রহীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের ফোকাস করার কাজটি শুরু করেছেন। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের নামে কে কি করল এসব নিয়ে একদম ভাবছে না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তাদের ভাবনা একটাই নির্বাচন তো হবেই। তাই ওইসব মামলা, মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে সময় নষ্ট না করে ভোটারদের সাথে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটানোই ভোটের মাঠে অনেক বেশি পজেটিভ হয়ে কাজে লাগবে। এই প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের অষ্টম সিটি কর্পোরেশনে পা রেখে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২১৮ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে ৬৯ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৬৫ ভোটকেন্দ্রের ৪২১টি ভোটকক্ষের সবকটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়। ইভিএম বাতিল ও সেনা মোতায়েন না করায় বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও দলের অন্যতম নেতা মনিরুল হক সাক্কু সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফজল খানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ওই সময় তিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জয়লাভের পর তিনি আবার দলে ফিরে যান। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এ বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখ কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে। গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারের পর কুমিল্লায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কাজে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা নেই। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। এ বছর ইউপি নির্বাচনও দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো অংশ নিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে। আর এমনটি হলে দল থেকে এবার মেয়র পদে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি রেখেছেন মনিরুল হক সাক্কু। আবার মেয়র সাক্কুর ঘনিষ্ঠজনরা বলাবলি করছেন বিএনপি নির্বাচনে না এলে সাক্কুকে এবারও সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আনা হবে। এবার বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র সাক্কু ছাড়া সম্ভাব্য অন্য কোনো নেতার নাম শোনা যাচ্ছে না। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে মেয়র সাক্কু বলেছেন, গত সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নগরীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। নগর সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রমী রূপে। সব ওয়ার্ডেই উন্নয়ন হয়েছে। এখনো উন্নয়ন কাজ চলছে। দল যদি নির্বাচনে আসে এবং তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি পরিবেশ পরিস্থিতি চিন্তা করে মত দেবেন। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পেতে পারেন এমন গুঞ্জনে কেবল মহানগরই নয়, গোটা কুমিল্লাই মুখরিত। তবে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মহানগর যুবলীগের অন্যতম নেতা বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আরফানুল হক রিফাত। তিনি কুমিল্লা সদরের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অতি আস্থাভাজনের জায়গায় রয়েছেন। প্রার্থিতা প্রসঙ্গে রিফাত বলেন, হাজী বাহারের নেতৃত্বে সদরে আওয়ামী লীগ আজকে গতিশীল। সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। সদরের উন্নয়নের রূপকার তিনি। তারই একজন কর্মী হিসেবে আমি আগামী দিনে নগর কুমিল্লাকে মডেল সিটিতে পরিণত করতে পারব। দল সবদিক বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দিলে ইনশাল্লাহ নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর সার্বিক চাহিদা ও সমস্যা সমাধান করতে পারব। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন গত সিটি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খান কন্যা আনজুম সুলতানা সীমা। তিনি বর্তমানে সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তার আগে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও আগে কুমিল্লা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিকবার তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সীমার ছোট ভাই কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরানও প্রার্থী হতে চাইছেন। তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন সালামত আলী খান বাচ্চু। গতবারের বিজিত প্রার্থী মেজর (অব.) মামুন নূর রশিদ এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। এদিকে গত নির্বাচনে যেসব কাউন্সিলর পরাজিত হয়েছেন তারাসহ নতুন মুখের অনেকেই নির্বাচন করার আগ্রহ নিয়ে সমর্থন ও দোয়া চাওয়ার জায়গায় সীমাবদ্ধ রয়েছেন। আর বর্তমান কাউন্সিলররা ব্যানার ফেস্টুনে নিজেদের উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে নেমেছেন মাঠে। সবমিলে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নতুন পুরনো মুখের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কুসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ফোকাসে এনে পরিবেশ সরগরম করে তুলছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন