রবিউল কবির মনু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে
গরিব অসহায় এক পরিবারের ৪ সদস্য অজ্ঞাত রোগে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কাজ-কর্ম করতে না পারায় তারা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের রাজস গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের এক অসহায় পরিবার। এই পরিবারের মৃত ছলিম উদ্দিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (৫০)সহ তার ৩ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে এবং ১ নাতি অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। তারা এখন চলতে ফিরতে এবং কাজকর্ম করতে না পারায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরেজমিন রাজস গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ সদস্য মৃত ছলিম উদ্দিনের স্ত্রী আছিয়া বেগমের সাথে। তিনি জানান, তার বয়স যখন ৭/৮ বৎসর তখন হঠাৎ করে হাত পায়ের নীচের দিক থেকে আস্তে আস্তে অবশ হয়ে আসতে থাকে। মা-চাচীরা বলছে বাও-বাতাস লেগেছে এমনি ভাল হয়ে যাবে। গরিব বাবা মা’র পক্ষে চিকিৎসা করাও সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় ১৫/১৬ বৎসর বয়সে তার বিয়ে হয়। এখন তার বয়স প্রায় ৫৬ বৎসর। সারাদিন শুয়ে-বসে দিন কাটান। মাঝে মধ্যে দুই হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। বিয়ের কয়েক বৎসর পর তার প্রথম সন্তান আশরাফ আলী সুস্থ ভাবেই জন্মগ্রহন করে এবং সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠার প্রাক্কালে কৈশোর জীবনে তার বাবা ছলিম উদ্দিন আকষ্মিক মৃত্যুবরণ করে। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরে কিশোর বয়সেই রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করে আশরাফ। এরপর বেশি রোজগারের আশায় ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ শুরু সে। ২০/২২ বছর বয়সে গার্মেন্টসে চাকরি করা কালীন সময়ে একই গার্মেন্টসে কর্মরত নারী শ্রমিক ভোলা জেলার পিতৃহীন জিন্নাতুল নামের এক অসহায় মেয়েকে বিয়ে করে আশরাফ আলী। দুইজনের রোজগারে ভালই চলছিল তাদের ছোট্ট সংসার। ২০০৫ সালের প্রথম দিকে আশরাফের দুই পা দুই হাত আস্তে আস্তে অবশ হতে শুরু করায় এবং জিন্নাত অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাদের রোজগারের চাকা হঠাৎ করে থেমে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরে তারা। ২০০৫ সালের ১২জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক সাহাদাত হোসাইন রিপনের মাধ্যমে আশরাফের এনসিভি ও ইএমজিসহ বেশ কিছু ডায়াগোনোসিস করা হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। এরমধ্যে ২০০৫ সালের ২৪ নভেম্বর আশরাফ-জিন্নাত দম্পতির কোল জুড়ে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। আশরাফ-জিন্নাত দম্পতি তাদের একমাত্র সন্তান জিহাদ’কে ঢাকা সিটি করর্পোরেশনের টিএন্ডটি কলোনীর ৪৬৩নং টিকা কেন্দ্র থেকে ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি হতে ২০০৬ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়া হয়। এরপর আশরাফ আলীর পায়ের অবশতা আরো বেশি হওয়ায় ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসে সে। এখন সে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে। ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর কোন কাজ করতে না পারায় মাঝে মধ্যে হাটে-বাজারে অথবা বন্দরের কোন এক স্থানে বসে বাদাম, বুট ভাজা বিক্রি করে দু-চার টাকা রোজগার করে সংসার চালিয়েছে। এখন লাঠি ছাড়া দাঁড়াতেও পারে না লাঠি ছাড়া চলাচলও করতে পারে না। বসে বসে চলাফেরা চলাফেরা করেন। ভিক্ষে করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছে। বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী আশরাফ আলী জানান, তার শিশুপুত্র জিহাদ ৫/৬ বছর পর্যন্ত ভালই ছিল। হঠাৎ করে জিহাদেরও হাত-পা অবশ হয়ে চিকন হয়ে যাওয়ায় সেও এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারে না। এ অবস্থাতেই জিহাদ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। আশরাফের দ্বিতীয় ভাই হাসমত (২৭) ২ মেয়ে ১ ছেলেসহ বর্তমানে সুস্থ আছে। আবার তৃতীয় ভাই আশাদুল (২৫) তারও দুই হাত দুই পা অবশ হয়েছে। সে বর্তমানে ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করে। তার ২ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। আশরাফ জানায়, আমার মা অচল, আমি অচল, আমার ভাই অচল, আমার শিশু সন্তান অচল। একটি পরিবারের ১জন বাদে ৪ জন সদস্যই অচল হয়ে পড়ে আছে। তাই মা, স্ত্রী- সন্তানদের নিয়ে খুব দুঃখ-কষ্টে ভিক্ষে করে দিন কাটাচ্ছি। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার যা হবার তা হয়েছে কিন্তু আমার সন্তান জিহাদ যেন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলা-ফেরা করতে পারে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট শিশু জিহাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সহ আর্থিক সহায়তার দাবি করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন