শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

খুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো এক যুগেও ভাঙা হয়নি

৪০ ভবন অপসারণের নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে

সাম্প্রতিককালে ভূমিকম্পে কয়েকবার কেঁপে উঠেছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল। তবুও টনক নড়ছে না ভুক্তভোগীদের ও কর্তৃপক্ষের। শুধু ভীত বিহবল হয়ে সামন্য নড়েচড়ে বসছে। সমস্যার তিমির ভেদ হচ্ছে না। অথচ নেই ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় কোন প্রস্তুতি। এক যুগেও খুলনার দুই শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে না ফেলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। এরমধ্যে মহানগরীর বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র বড় বাজারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনার ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি ভবন অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত ৬ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল এ নির্দেশ দেন। এছাড়া গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কেসিসি’র এক সভায় নগরীতে অধিক ও আংশিক মিলে তিন ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত ৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব ভবনের ২০টির মালিকানা খুলনা জেলা প্রশাসন, ১৮টি গণপূর্ত বিভাগের, ৯টি ব্যক্তি মালিকানায় এবং ১টি কেসিসি’র। সভায় এসব ভবনের মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী ২৬টি ভবন ভেঙে সম্পূর্ণ অপসারণ, ১৭টির নিচতলা রেখে বাকি অংশ ভেঙে পুনঃনির্মাণ এবং ৫টি ভবনের সম্প্রসারিত অংশ অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে মোতাবেক সংশ্লি­ষ্ট ভবনগুলোর মালিকদেরও নোটিশ প্রদান করা হয়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অপসারণ অভিযান শুরুর কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাদ ভেঙে নতুন ছাদ দেওয়া হচ্ছে। চলছে প্লাস্টারের কাজ। এর পরই তাতে করা হবে রং। এভাবেই বদলে ফেলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ভবনগুলো। সূত্রমতে, নগরীর মুজগুন্নী ও নিরালা আবাসিক এলাকার খাল, জলাধার, চাষাবাদের নরম মাটিতে দ্রুত অধিক মুনাফা অর্জনের লোভে একশ্রেণীর ভবন মালিক আবাসিক ভবন গড়ে তুলেছে কেডিএ’র প্লান/নকশার বাইরে। যার ৩ তলার অনুমোদন সে ৫ তলা গড়ে তুলেছে। মাটির শক্তি নেই সেই ভবনটিকে ধরে রাখার। কেডিএ’র সয়েলট টেস্ট করে যেগুলো ৩ তলার বেশি অনুমোদন দেয়নি সেগুলোর মালিক কেডিএ’র চোখ ফাঁকি দিয়ে গড়ে তুলেছে ৫ তলা বা তার বেশি। ফলে ভবনগুলো বিভিন্ন দিকে হেলে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। সূত্রমতে, ২০০৪ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নগরীর এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করলেও তার একটিও এক যুগেও ভাঙা সম্ভব হয়নি। ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য প্রত্যেক বছর তোড়জোড় করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বসবাসের অযোগ্য শত বছরের পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে বাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব ভবন যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। ঘটতে পারে সাভারের রানা প্লাজার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। প্রতি বছরই এসব বাড়ি নিজ খরচে ভেঙে ফেলার নোটিশ দেয় সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সে নোটিশে আজ পর্যন্ত কারও টনক নড়েনি। এরইমধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে কয়েকবার হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে বাসিন্দাদের এরপরও সরানো যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে কয়েক শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। রয়েছে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও। সূত্রমতে, সর্বশেষ ১/১১-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ২০০৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মাধ্যমে ৪৪টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরও ১০৭টি বাড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করে। এই ১০৭টি ভবনের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত ৪৪টি ভবনের সঙ্গে আরও ৫০টি ভবন যোগ হয়ে কেসিসি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪-এ। পক্ষান্তরে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত এলাকা নওয়াপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় নওয়াপাড়া পৌরসভা ও দামোদর ইউনিয়ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৫৭টি। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০১টিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বড়বাজার এলাকায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি ভবনের অধিকাংশ দোতলা বা তিনতলা। এসব ভবনের ওপরের অংশে লোকজন বসবাস করছেন এবং নিচতলায় দোকানপাট ও কাঁচামালের আড়ত। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে বসবাসকারী মানুষ ও বাজারে আসা লোকজনের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। এ বাজারে ২০০৮ সালে একটি ভবন ধসে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হন। নগরীর জেলা কারাগারের পুরনো ভবন, টুটপাড়া আনসার ক্যাম্পের ভেতরে ভূতের বাড়ি, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি তিনতলা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন