দক্ষিণা হাওয়াতে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি আমন ধানে জড়িয়ে থাকা কৃষকদের ঘাম ঝড়ানো বুকভরা স্বপ্ন। তাই নবান্নের উৎসবে মেতেছে সীতাকুন্ড উপজেলার ৭ হাজারেরও বেশি খেটে খাওয়া কৃষক পরিবার।
আর এ সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে নতুন সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। নবান্ন মানে কৃষক পরিবার তার বাড়ির আঙিনায় সোনালি ধান তোলার দিন। এখানকার কৃষক প্রতিটি আমন সৌসুমে সোনালি মাঠথেকে ধান কাটার পর মাড়াই শেষে তা গোলায় তোলে নেয়। এরই ধারাবাহীকতায় উচ্চ ফলনশীল উপসী জাতের হাইব্রিড সোনালি ধান আমন কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষক ও কৃষাণীরা দিনরাত পার করছেন। সে ক্ষেত্রে অধীক পরিশ্রমের ফলে তাদের লক্ষ্যমাত্রাও এবার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তারা। কৃষি অফিস ও বিভিন্ন অঞ্চলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও আমনের বিভিন্ন প্রজাতীর সোনালি ধান উৎপাদনে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। এমনি এক কৃষক পশ্চিম নডালিয়া গ্রামের কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ধান প্রদর্শনী অনুষ্ঠান থেকে অন্যান্য কৃষকদের মত বিনামূল্যে তিনিও ৫ কেজি ব্রিধানের বীজ ও ৪০ কেজি সার সংগ্রহ করে ২৮ শতক জমিতে রোপন করেছেন। এছাড়া নিজেও আরো ২০০ শতক জমিতে উপসী জাতের ব্রিধান বীজ ক্রয়করে জমিতে রোপন করেন। সে হিসেবে এবার মোট ২২৮ শতকে তিনি আমন ধানের চাষ করেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের জুলাইর প্রথম সপ্তাহে জমিতে আমন চাষ শুরু করেন। এতে খরচ পরেছে সব মিলিয়ে প্রতি একরে ৭/১০ হাজার টাকা।
২২৮ শতকে চাষকৃত জমির ধান উৎপাদন হবে ১শ’ মনের মত। যা গতবছর থেকে অনেক বেশি। তিনি বলেন, এ এলাকায় ১৫০ জন কৃষক আমনের বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন। একই এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব ও তার ৭২ শতক জমিতে ব্রিধান ৪৯ জাতের আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন প্রতি বছরের তোলনায় চলতি বছরে আমনের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। তাই স্কুলে পড়–য়া ছেলেও এবার আমার সাথে ধান কাটার উৎসবে মেতেছে। এদিকে বাড়বকুন্ড দক্ষিণ মাহমুদাবাদ বøকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, নডালিয়াসহ মাহমুদাবাদ গ্রামে ৪শ’ থেকে ৫শ’ কৃষক মৌসুমে ৩শ’ হেক্টর জমিতে উপসী এবং হাইব্রিড জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন। আমনের উৎপাদনে এখানকার কৃষক পরিবারগুলো মহাখুশি। তাই কমড়ে গামছা বেধে ধান ক্ষেতে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে ধান কাটতে নেমে পরেছেন। অন্যদিকে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরীয়াইল বøকে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস চৌধুরী জানান, অন্যান্য বছরের মত এখানে প্রায় ৮শ’হেক্টর জমিতে ৩৯০ জন কৃষক আমন চাষ করেছেন।
এ বিষয়ে ধান উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ ইনকিলাবকে জানান, এবার আমনের বিভিন্ন প্রজাতীর ধান উৎপাদনে কৃষকরা মুগ্ধ হয়েছেন। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে অন্যান্য বছরের তোলনায় অনেক বেশি।
কোন রকম রোগ বালাই দেখা যায়নি। এর মধ্যে উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল উপসী হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ হয়েছে ৬ হাজার ২শ’ ৬৫ হেক্টরে এবং কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে ৭ হাজার ৫শ’কৃষক। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৮শ’৩৮ মেট্রিক টন। আমরা আশা করছি এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন