মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষিগঞ্জ গ্রামের সাথে মাদারীপুর শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার পথ সুগমকরনে প্রায় ৪ বছর আগে কুমার নদের ওপর নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। কিন্তু সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়ায় নির্মিত সেতুর সুফল পাচ্ছেনা ৬ ইউনিয়নের পঞ্চাশ হাজার মানুষ। সংযোগ সড়কের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়ায় ৪ বছর ধরে আটকে আছে সংযোগ সড়কের কাজ। কবে নাগাদ এ জটিলতার অবসান হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা প্রশাসন।
মাদারীপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সদর উপজেলার লক্ষিগঞ্জ গ্রামের কুমার নদের উপর ৯৯ মিটারের একটি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর এলজিইডি। চলতি বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হয়। ৬ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটির ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে হামীম ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে ৫ কোটি এক লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছেনও তারা। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি সেতুটির দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিনেও সেতুটির সংযোগ সড়কের কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
সরেজমিনে লক্ষীগঞ্জ গ্রামে গেলে গৃহবধূ রহিমন আক্তার জানান, ‘সেতু নির্মাণের আগে নৌকায় যেভাবে নদী পাড় হয়েছি এখনও সড়ক ব্যবস্থা না হওয়ায় একইভাবে বাধ্য হয়ে পারাপার হচ্ছি। ব্রিজের সংযোগ সড়ক না থাকায় বর্তমানে খানাখন্দ সড়ক দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা ব্রিজের সাথে সংযোগ সড়ক দ্রুত চালু করার দাবি জানাই।’
রুবেল বেপারী নামে অপরএকজন জানান, ‘নদীর ওপারের রাস্তি পাচখোলা কালিকাপুর বাহাদুরপুর ধুরাইল ও দুধখালী ৬ টি ইউনিয়নের ৫০ হাজারো মানুষের বসবাস। হাটবাজার, স্কুল-কলেজ সবই নদীর এ পারে। তাই প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে আমাদের ওপারে যেতে হয়। সেতুটি নির্মাণ হলে সংযোগ সড়কের অভাবে ৫০ হাজার মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ এখন নিত্য সঙ্গী।’
স্থানীয় আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক খালেদুর রহমান জানান, ‘এক সময় লক্ষীগঞ্জসহ ৬ ইউনিয়নের মানুষের এর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। একটি সেতুর অভাবে স্বাধিনতার পর থেকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল এসব এলাকার মানুষ। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের যাতায়াতসহ কৃষি পণ্য আনা নেয়ায় ভোগান্তি ছিল চরমে। তবে শেষ পর্যন্ত সেতু হলেও যাতায়াতে সুফল পাওয়া যায়নি একমাত্র সংযোগ সড়কের অভাবে।’
জানতে চাইলে মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার জানান, সংযোগ সড়কের জন্য জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় পরবর্তী কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না এবং সেতুর দুইপাশে একশ’ ১০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মানের জন্য এলজিইডি ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা অনেক আগেই জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহনের জটিলতার কারণে এপ্রোচ সংযোগ সড়কের কাজ এখন আটকে রয়েছে।
জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, সংযোগ সড়কের জন্য যে জমি অধিগ্রহন করা হবে সেই জমি নদী সিকয়স্তি না পয়স্তি বা ব্যক্তি মালিকানার কিনা তা নির্ধারনের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ভুমি অধিগ্রহনের জন্য দীর্ঘদিনে সংশ্লিষ্ট ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা (এল এ ও ) না থাকার কারনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিলো। সম্প্রতি একজন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা না থাকলেও দ্রুত জমি অধিগ্রহন করে সংযোগ সড়কের কাজ করনের জন্য এলজিইডিকে বুঝিয়ে দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি চালু করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন