ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা গাজীরটেক ইউনিয়নে বন্যার্ত ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ করে চলেছেন ভুক্তভোগী দুস্থ পরিবার, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারে মাসে ২০ কেজি করে ত্রি-মাসিক ভিজিএফ চালের জন্য সম্প্রতি কার্ড বরাদ্দ দিয়েছে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার মোট ১ হাজার ৭শ’ ৫১ কার্ডের মধ্যে গাজীরটেক ইউনিয়নে রয়েছে ৭২১টি ভিজিএফ কার্ড। উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বররা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে যেসব এলাকায় বন্যায় ক্ষতি নাই তাদের মধ্যে প্রায় ৪শ’ ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করার অভিযোগ ওঠেছে। ফলে প্রকৃত বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের অনেক পরিবার ভিজিএফ কার্ড পায়নি বলে অভিযোগ। উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী জানান, বন্যা চলাকালীন সময়ে আমরা যে তালিকার মাধ্যমে সাহায্য দিয়েছি সে তালিকা থেকেই ভিজিএফ কার্ডের তালিকা করা হয়েছে, তবে কমবেশি ভুল হতেই পারে। ইউনিয়নটি ঘুরে জানা যায়, এ বছর বন্যায় উক্ত ইউনিয়নের পদ্মা নদীর পাড় এলাকা ও পার্শ্ববর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হচ্ছে- ওই ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রাম, মধু ফকিরের ডাঙ্গী গ্রাম, বেপারী ডাঙ্গী গ্রাম, হাজী ডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ বাজার এলাকা, জয়দেব সরকারের ডাঙ্গী, ঢালার পাড়, নতুন ডাঙ্গী, মাঝি ডাঙ্গী রমেশ বালার ডাঙ্গী ও চরহোসেনপুর গ্রাম। এসব গ্রামে এ বছর বন্যায় প্রায় ৮শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ২৫০টি কার্ড। এতে বন্যার্ত ভিজিএফ কার্ড বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ৫শ’ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, চেয়ারম্যান প্রকৃত বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হক নষ্ট করে এক চেটিয়াভাবে তার বাড়ির এলাকা ২নং ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ করেছেন, আমরা কিছু বলতে গেলে সামনে আমাগো কোনো প্রকল্প দিবে না, সিøপও দিবে না। গতকাল ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের পদ্মার ভাঙন ও বন্যায় সর্বনিঃস্ব আঃ কাদের মোল্যার স্ত্রী রাহেলা বেগম, শহর পত্তনদারের ছেলে আদেল, রাহেল পত্তনদারের স্ত্রী হামিদা বেগমসহ অনেকেই বন্যার্ত ভিজিএফ কার্ড না পাওয়ার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। উক্ত ইউনিয়নে বরাদ্দপ্রাপ্ত বাকি ৪৭১ খানা ভিজিএফ কার্ড বন্যায় ক্ষতিহীন গ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ক্ষতিহীন গ্রামগুলো হচ্ছে ইউনিয়নের উঁচু এলাকার চর স্বর্বান্দিয়া, গাজীরটেক গ্রাম, রাহেল প্রামানিকের ডাঙ্গী, দক্ষিণ চরসুলতানপুর, চরসুলতানপুর, চরঅযোধ্যা, তেইলী ডাঙ্গী, দ্বারিক সর্দারের ডাঙ্গী, দোপা ডাঙ্গী, শীল ডাঙ্গী, শিকদার ডাঙ্গী, দিরাজদ্দিন প্রামানিকের ডাঙ্গী, ছকেল মাতুব্বরের ডাঙ্গী, আলী বেপারীর ডাঙ্গী, ফকির ডাঙ্গী, খালপাড় ডাঙ্গী, রহমান প্রামানিকের ডাঙ্গী, বাঞ্চারাম বিশ্বাসের ডাঙ্গী, ছিটাডাঙ্গী ও আলী হোসেন ডাঙ্গী। এসব গ্রাম সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বররা ইউনিয়ন পরিষদের ভাগাভাগি হারে কার্ড নিয়ে বিতরণ করেছেন বলে তারা দাবি করে চলেছেন। গতকাল গাজীরটেক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বর ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ ফকির জানান, “ওয়ার্ডে বন্যায় ক্ষতি না হলেও চর স্বর্বান্দিয়া গ্রামে কুম পাড়ে পানি উঠেছিল তাই এলাকায় ২৫টি ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করেছি। এদের মধ্যে ওই গ্রামের শেক আরশাদের স্ত্রী আয়শা বেগম, কালাম খালাসীর স্ত্রী তাছলিমা, আবুল কাশেমের চেলে মনির হোসেন, শেখ জালাল উদ্দিনের ছেলে শেখ সিরাজ, মুজিবুর মুন্সির ছেলে কুদ্দুস মুন্সিসহ অনেকেই রয়েছে বলে তিনি জানান”। এ ব্যাপারে উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার রোকসানা রহমান বলেন, “বন্যার্ত ভিজিএফ তালিকা তৈরি কালে আমি ছিলাম না। পিআইওকে তালিকাটি যাচাই-বাছাই করার জন্য বলছি”। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মানব বোস জানান, “উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত তালিকা সংশোধনের জন্য দুই দফায় ফেরত দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সরকারি নির্দেশনা মতে গত আগস্ট মাসে বন্যা কবলিত পরিবারের ৩৫ শতভাগ বন্যার্ত ভিজিএফ কার্ডপ্রাপ্তির অধিকার থাকায় তাদের বন্যাকালীন তালিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভিজিএফ তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে”।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন