বছরের এ সময়টা মাঠে আমন ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। কৃষক প্রস্তুতি নেয় বোরো আবাদের। যেখানে আমন কাটা শেষ হয়েছে, সেখানে জমি পরিষ্কার করে বীজতলা তৈরির প্রাথমিক কাজ সারছে কৃষক। আমনের পর বোরো কৃষকের সংসারে বছরের অর্ধেকের চালের যোগান দেয়। তবে এবার ডিজেল ও বীজ ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে খুলনাঞ্চলের কৃষক।
কৃষক সূত্রে জানা যায়, কেজি প্রতি ১১ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে খুলনায় বীজধান মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, সেচ মেশিন চালানোর মূল উপাদান জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। এতে ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে টানা আট মাস অনাবৃষ্টি, কালবৈশাখী, লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বোরো আবাদ অনুক‚লে ছিল না। সেচ দিয়ে সতেজ রাখতে হয়েছিল জমি। বিদ্যুৎ সঙ্কটে সেচযন্ত্রে ডিজেল ব্যবহার করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া মাজরা ও পাতামোড়ানো পোকার আক্রমণ এবং ইউরিয়া সারের সঙ্কটে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েন।
চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চারা প্রস্তুত মৌসুম শুরু হয়েছে। চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে উৎপাদন খরচ নিয়েই এখন তাদের যত দুশ্চিন্তা। কারণ সেচকাজে ব্যবহারের মূল উপাদান ডিজেলের পাশাপাশি বেড়েছে ধানবীজের দাম।
জেলার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা, দীঘলিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধান চাষের বীজতলা তৈরি শুরু করেছেন কৃষকরা।
জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের কৃষক আউয়াল হোসেন জানান, ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ টাকা, বীজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১১ থেকে ১৫ টাকা। বীজের দাম বাড়ার কারণে তিনি এখনো বীজ বুনতে পারেননি। অপরদিকে বোরো চাষে সেচ গুরুত্বপূর্ণ। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচে খরচ এবার আরো বাড়বে।
তেরখাদা উপজেলার কৃষক মোস্তফা জানান, শ্যালো কিংবা সেচ মেশিন চালাতে ডিজেলের প্রয়োজন। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেচ খরচও বাড়বে। সবমিলিয়ে ধান উৎপাদনে খরচ গতবারের তুলনায় বাড়বে। সেই হিসাবে দাম না পেলে কৃষক সর্বস্বান্ত হবেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন জানান, কৃষকের সমস্যা লাঘবে কৃষি বিভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় ভালো ফলন পাবেন।
বিএডিসি (বীজ) খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, কোনো অবস্থাতেই বীজের সঙ্কট হবে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার বীজের দাম বেড়েছে। বীজতলা শুরুর আগেই জেলা, উপজেলা পর্যায়ের ডিলারদের কাছে চাহিদা মতো বীজ পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলার ফুলতলা বীজগুদামে বিআর-২৮, ৫৫, ৬৩, ৬৭, ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৮, ৮৯, বিনা-৮, ৫, ১০, ১৪, বিআর-৩, ১৪, ১৬, ২৬ জাতের বীজ এসেছে। তবে বৃহত্তর খুলনায় বিআর ২৮ জাতের চাহিদা বেশি বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় এবার ৫৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন