মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ কি পারবে চীনের ঋণ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে

প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেহেদী হাসান পলাশ
গত ১৫-১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করে গেলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইতোপূর্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে শি জিনপিং একবার বাংলাদেশ সফর করলেও ৩০ বছরের মধ্যে এটাই কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর। সে হিসাবে এ সফরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন সবকিছু ছেড়ে ভারতকে আঁকড়ে ধরেছে, তখন ভারতের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রেসিডেন্টের সফরের বিশেষ গুরুত্ব সহজেই উপলদ্ধি করা যায়। ইংরেজিতে প্রবাদ রয়েছে ফরচুন ফেভার্স দ্য ব্রেভ- ভাগ্য সাহসীদের পক্ষপাতিত্ব করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলায় সেটাই ঘটেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকারের বৈধতা নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক দেশই উষ্মা প্রকাশ করেছিল। আর সেসব দেশের নেতৃবৃন্দ এখন নিজেদের গরজে বাংলাদেশে আসছেন, বৈঠক করছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সাথে। যে দেশের রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বর্তমান সরকারকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন, সেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি স্বয়ং এসে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এসেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। অথচ পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক কী না করেছে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কিছুতেই দমে যাননি। রাইট অর রং, তিনি তার অবস্থানে অটল থেকেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ৬-৭ হাজার কোটি টাকার কাজ এখন ঠেকেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকাতে। এতে বিশ্বব্যাংকের বা কারোরই প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বিশ্বব্যাংক এখন নিজেই বলছে পদ্মা সেতুর অর্থ বাংলাদেশ থেকে তারা সরিয়ে নেয়নি। সে অর্থ অন্য খাতে ঋণ দেয়া হবে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম নিজে ঢাকা এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেছেন। শেখ হাসিনা আবার দেখিয়েছেন বিশ্ব বিজয়ীকেই স্যালুট করে। হয়তো বিশেষজ্ঞগণ বলবেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের বিশ্ব পরাশক্তিগুলোকে যতটা প্রয়োজন, পরাশক্তিগুলোরও বাংলাদেশকে তার চেয়ে কম প্রয়োজন নয়। তাই জন কেরি, জিম ইয়ং কিমের মতো ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার সাথে কথা বলছেন। প্রকৃতপক্ষে সময় পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের সাথে টিকে থাকাও কম কিছু নয়।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব সাক্ষরিত হয়েছে। গণমাধ্যমে এটাকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব হিসাবে তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে উভয় দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং উভয় দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা চুক্তি, যার আওতায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পে ২১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আট কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদানের জন্য অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি, দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য ২৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি এবং ছয়টি জাহাজ সম্পর্কিত মোট চারটি ঋণচুক্তি। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দিতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণেও দুটি কাঠামো চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। এর বাইরে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সহযোগিতা, মেরিটাইম কো-অপারেশন, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই, আইসিটিতে নতুন ফ্রেমওয়ার্ক, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও তথ্য আদান-প্রদান, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো চুক্তি হয়েছে। শুধু বেসরকারি খাতেই চীন বিনিয়োগ করবে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ। এছাড়া সরকারি পর্যায়ে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে।’
কার্যত এটি ঋণ প্রস্তাব। ঋণ প্রস্তাব হলেও ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ কোনোভাবেই ছেলে খেলা নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সর্বকালের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রস্তাবনা চুক্তি। এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে ঢুকলে তা বাংলাদেশের জিডিপির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই। তবে এই ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের কতটুকু বাংলাদেশে কাজে লাগাতে পারবে তার উপরই নির্ভর করে এ ঋণ পাওয়ার ভবিষ্যৎ। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ভাষায়, এটা তো কিছুই না, এটা একটা বাতাস মাত্র। অর্থাৎ বায়বীয়। এই বায়বীয় পদার্থের কতটুকু বাংলাদেশ কঠিন করতে পারে তা নির্ভর করছে বাংলাদেশের যোগ্যতার, দক্ষতার ও নীতির উপর। সকলের জানা আছে, ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। এই সফরে জাপান ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। কিন্তু দুই বছর পার হলে গেলেও জাপানের প্রতিশ্রুত ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশিরভাগ অর্থই পায়নি বাংলাদেশ। পায়নি বলার চেয়ে বলা ভাল বাংলাদেশ আনতে পারেনি, নিতে পারেনি দক্ষতা ও কূটনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে। সে কারণে চীনা এই ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাবের বাতাসের কতোটুকু আসলে বাংলাদেশ বাস্তব করতে পারবে তা সামনের দিনগুলোই বলে দেবে। চীন যে সকল প্রকল্পে ঋণ দেবে বলে সম্মতি চুক্তি করেছে, এখনো সেসব প্রকল্পের যোগ্যতা যাচাই হয়নি। ঋণের শর্ত জানা হয়নি। আমরা জানি, চীন যেসব ঋণ দেয় তাতে অনেক শর্ত থাকে। তার মধ্যে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট অন্যতম। চীনা ঋণে প্রকল্প চালাতে চীন থেকে মালামাল ও লোকবল নেয়া বাধ্যতামূলক থাকে। এ ছাড়া সে ঋণে সুদের হারও কম নয়। বিশ্বের বহু দেশকেই চীনা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দর রাজা পাকশেকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার অন্যতম কারণ চীনা ঋণ। বাংলাদেশ চীনের প্রতিশ্রুত ২৪ বিলিয়ন ডলারের কতোটুকু গ্রহণ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে । তবে অবশ্যই ভারতীয় ঋণের থেকে এ ঋণ অনেক ভাল। ভারত বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ যে কঠিন সুদ ও শর্তে দিয়েছিল তার থেকে চীনা ঋণ অবশ্যই ভাল হয়ে থাকে।
এদিকে বাংলাদেশকে চীনের ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যতটা উৎফুল্লতা দেখা গেছে ভারতীয়দের মধ্যে ততটাই উদ্বেগ দেখা গেছে। ভারতীয় কোনো কোনো গণমাধ্যম দাবি করেছে ভারতের জন্য রাখা ২৪ বিলিয়ন ডলার ভারতকে না দিয়ে চীন বাংলাদেশকে দিয়েছে। কেউ বলেছে, ভারতের ২ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে চীন বাংলাদেশকে কাছে টানতে ২৪ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে ভারত শঙ্কায় আছে ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাঁধনে আটকে চীন আবার না বাংলাদেশকে ভারতের অক্টোপাশ থেকে মুক্ত করে ফেলে। আশঙ্কাটা এত প্রবল যে, ভারতীয় মিডিয়া শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করে ফেলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, চীনবাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ কি দিল বা চীন কি পেল বাংলাদেশ থেকে ? আমরা সকলেই জানি চীনারা বেনিয়ার জাত। ব্যবসাই তাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বর্তমানে ব্যবসায় পাশাপাশি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতেও চীনের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়ার একক পরাশক্তি হিসাবে চীন নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। এ ক্ষেত্রে তার অর্থনীতিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাপান ও সামরিক সেক্টরে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। আর এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে বৈশ্বিক পরাশক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট এক হয়ে চীনকে চেপে ধরতে উদ্যত হয়েছে।
এদিকে গত এক শতকে বৈশ্বিক যুদ্ধ ময়দান- মধ্যপ্রাচ্য ক্রমশ তার গুরুত্ব হারাতে শুরু করেছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর পাশ্চাত্য ইসলামকে যেভাবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী করে দেখেছিল এবং তা দমনে ফান্ডামেন্টালিজম, ওয়ার এগেইনেস্ট টেরোরিজমের নামে মুসলিম দেশগুলোতে আগ্রাসন চালিয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালে ইরাক আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধ শুরু একবিংশ শতকের দেড় দশক পার হয়ে এসে ইসলামকে আর একক প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে না। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বের প্রধান কারণ পেট্রোলিয়ামের মজুদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসায় জ্বালানি সন্ধানী পাশ্চাত্য এখন নতুন জ্বালানি উৎসের সন্ধানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে। বিশেষজ্ঞরা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্যের পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলোর সাথে ওই সকল দেশের যুদ্ধবাজদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কারণ আর কিছু নয়, যুদ্ধ বাধিয়ে পেট্রোলিয়াম খনিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং স্বল্প মূল্যে বা বিনা মূল্যে তেল সংগ্রহ করা। তাই পাশ্চাত্যের যুদ্ধবাজরা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রকে সরিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে নিয়ে আসছে বলে ভূবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান বাধা হচ্ছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র তার এশীয় মিত্র শক্তির সহায়তায় চীনকে ঘিরে ফেলতে খনিজ সম্পদ ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সাথে উষ্ণ সম্পর্ক ও নানা অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজে পারছে না সেখানে মিত্র শক্তি ভারতকে কাজে লাগাচ্ছে। এ কারণে আমরা দেখতে পাই দীর্ঘ নয় বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ চালানো দেশ ভিয়েতনামে ও প্রবল বৈরী দেশ ইরানে যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশ ভারতকে পাঠিয়ে সমুদ্রে অবস্থান সুদৃঢ় করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র শক্তি যেন ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে সে কারণে মিত্র দেশগুলোর সমুদ্র সীমায় চীন গড়ে তুলেছে স্ট্রিং অভ পার্লস বা মুক্তার মালা। এ মুক্তার মালা পাকিস্তানের করাচি, গোয়াদরে, শ্রীলংকার হাম্বানটোটায়, মিয়ানমারের আকিয়াবে চীনের সাহায্যে গঠিত সমুদ্র বন্দর সংযুক্ত রয়েছে। এ মুক্তার মালার আরো একটি পুঁতির নাম বাংলাদেশের সোনাদিয়া। চীন বহু বছর ধরেই চেষ্টা করে আসছে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত সে। বাংলাদেশ নৈতিকভাবে এ সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সমর্থন দিলেও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এবারের সফরে শি জিনপিং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সামলে বাংলাদেশ কিভাবে চীনকে দিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করায়।
বাংলাদেশ সফরে চীন বাংলাদেশের কাছে তার আরো একটি আগ্রহের কথা জানিয়েছে। তাহলো ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড। বাংলাদেশ যখন ভারতের ইশারায় পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান রোড নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, তেমনি পাকিস্তানও চীনের সহযোগিতায় বিপুল বাজেটে গড়ে তুলেছে খাইবার পাখতুন রোড নেটওয়ার্ক। ইতোমধ্যেই ইরান ও সৌদি আরব এই নেটওয়ার্কে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একই সাথে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরান মধ্যএশীয় দেশগুলোকে নিয়ে অর্থনৈতিক নতুন জোট গঠন করার প্রস্তাব নিয়েও কাজ করছে পাকিস্তান। দেখার বিষয়, বাংলাদেশ এখন চীনের প্রস্তাবিত এশিয়ার পূর্ব-পশ্চিমব্যাপী বিসিআইএস রোড নেটওয়ার্কে অংশ নিতে পারে কিনা? এ কথা অনস্বীকার্য যে এই চীনের এসব দাবির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ। কাজেই ২৪ বিলিয়ন ডলারের চাইনিজ ঋণ প্রস্তাব শর্তমুক্ত একথা মনে করার কোনো কারণ নেই। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাও সরকারের একমুখী পররাষ্ট্র নীতির সাথে সমন্বয় করে চাইনিজ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাবের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে।
email: palash74@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সালাউদ্দিন ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:২৮ পিএম says : 0
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের যতিই আপত্তি থাকুক না কেন বাংলাদেশের উচিত চীনকে দিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা
Total Reply(0)
Salma ২৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১:৩৩ পিএম says : 0
very nice, informative and logical writing
Total Reply(0)
তানভীর হাসান ৪ মার্চ, ২০১৮, ৩:১৩ এএম says : 0
যেকোনো কিছুর বিনিময় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর দরকার। এটা হলে দেশ এর অর্থনীতি পাল্টে যাবে সেজন্য ভারতের প্রধান আপত্তি
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন