দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দ্ব›েদ্বর জেরে কুড়িগ্রামের প্রায় ৩ লাখ মানুষ সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত। সেতুর কাজ শেষ না হবার বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর জেসি সড়কে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দৈর্ঘের নির্মাণাধীন এই সেতুটি। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু সঠিক সময় কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও আজও সেতুর কাজ শেষ হয়নি। দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং এলজিইড’র দ্ব›েদ্বর কারণে প্রায় ৬০% সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। সেতুর বিকল্প কাঠের সাঁকো দিয়ে চলতে নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এর প্রভাব পড়েছে কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাহাদ আলী বলেন, ঠিকাদার আর অফিসের দ্ব›েদ্বর কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। এই এলাকার মানুষ বহু কষ্টে থাকলেও কেউ গুরুত্বই দিচ্ছে না।
একই ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবশ গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন সেতুর কাজ শেষ না করায় সেতুর উত্তর পাশে দোলা জমিতে পানি আটকে রয়েছে। পানি নেমে না যাওয়ায় এই এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক আবাদ বঞ্চিত হচ্ছে। পানির জন্য বিছনও গাড়তে পারছি না। সরকার যেন দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নেয়।
কদমতলার বাসিন্দা আদুরী বেগম বলেন, যাতায়াত খরচ বেড়েছে। রোগি নিয়ে প্রায় ২০/২৫ কিলোমিটার রাস্তার ঘুরে হাসপাতাল যেতে হয়।
পাঁচগাছী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস শাফী বলেন, বহুদিন থেকে ব্রিজ না থাকায় গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শহরে মাল নিয়ে এসে হেটে কাঠের ব্রিজ পার করে নিয়ে যেতে হয়। এতে করে তিন দফা খরচ ব্যয় করতে হচ্ছে আমাদের। সেদিন সবজির বস্তা পার করতে গিয়ে কাঠের সাঁকোতে পা পিছলে কেটে গেছে। এই ব্রিজ না হওয়ায় সবাই দুর্ভোগে আছি যেটা বলার ভাষা নেই।
মেসার্স আল-আমিন ট্রেডার্স ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে কুড়িগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেভি। তাদের কাছ থেকে কাজটি আমমোক্তার নামা করে নিয়ে সেতুর কাজ করছি। কিন্তু এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর অসহযোগিতা এবং ১০ লাখ টাকার ওপরে কমিশন চাওয়ায় কাজটি শেষ করতে পারেনি বলে জানান তিনি। আর সে জন্যই কর্তৃপক্ষ কাজের চুক্তিপত্র বাতিল করেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমি হাইকোর্টে একটি রিট করেছি। হাইকোর্ট থেকে আমাকে ৩ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বললেও কর্তৃপক্ষের জন্য পারছি না।
মেসার্স বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেভির ঠিকাদার কে এম বদরুল আহসান মামুন বলেন, কিছু জটিলতার কারণে সেতুর কাজ সময় মতো শেষ হয়নি। তাই কাজের চুক্তিপত্র বাতিল হয়েছে। তবে হাইকোর্টে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ রিট করেনি। সদর থানায় এই বিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, সময় মতো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ শেষ করতে না পারায় চুড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। এরপর বিধি মোতাবেক সেতুর চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গোলাম রব্বানী নামে কোন ঠিকাদারের সাথে এলজিইডিতে সরকারের কোন চুক্তি নেই। তাই বাইরের কেউ কি অভিযোগ করল সে বিষয়ে মন্তব্য নেই কোন আমার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন