নিয়ম অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদফতরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই থাকতে হবে। এমনকি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদের স্থানটি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কোন নিয়মই কোথায়ও মানা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।
সিলেটের বিশ্বনাথ পৌর শহর ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামে-গঞ্জে প্রায় শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি আইন ও নীতিমালার তোয়াক্কা না দেদারছে বিক্রি করছে গ্যাস সিলিন্ডার। এর মধ্যে হাতে গুনা মাত্র ৪/৫টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে। ২০০৩ সালের দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি লাইসেন্স না নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করে তবে তার তিন বছরের কারাদন্ড ও অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
সরেজমিনে বিশ্বনাথ পৌর শহর ও উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদির দোকান, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিনের দোকান, ওয়েল্ডিংয়ের দোকান, আবাসিক ভবন, লাকড়ির দোকান, চায়ের দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশসহ জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। কিছু দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র টাঙানো থাকলেও জানা নেই তার ব্যবহার। অনেকের যন্ত্রগুলো অকেজো ও মেয়াদোত্তীর্ণ।
জৈনক এক প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ওয়েল্ডিং (ওয়ার্কসপ) এর দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। কিন্তু কেউ নিষেধ বাঁধা তো করেনি। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির কাগজপত্র সংগ্রহ করা তো অনেক ব্যাপার-সেপার। আর গ্যাস সিলিন্ডার তো আমরা কোথাও গিয়ে আনতে হয় না, ডেলিভারি গাড়ি এসে দোকানে দিয়ে যায়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায় দারুণ লাভ এমন এক গল্প শুনালেন এক ব্যাসায়ি। তিনি শর্ত সাপেক্ষে একটি গোপন একটি তথ্য জানান, সরকারি এলপি গ্যাস টোটাল গ্যাসের বোতলে ঢুকিয়ে অধিক লাভে বিক্রি করা যায়। এলপি গ্যাস টোটালের বোতলে রদবদলের ব্যবস্থা কেবল বিশ্বনাথেই আছে এবং দু’বছর পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসন জরিমানাও করেছে। ওই প্রতারক চক্রের একজনের নাম ও স্থান উল্লেখ করেন তিনি। এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।
গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দেয়ার বিধান থাকলেও কখনো কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি বিশ্বনাথে। নজরদারি না থাকার কারণে যত্রতত্র চলছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি। ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরনে বাসা বাড়িতে ঘটছে দুর্ঘটনার খবর পত্র পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের ২২ মার্চ উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজে একই পরিবারের ৬ জন দগ্ধ হন। এ ঘটনায় মা ও ২ ছেলের মৃত্যু হয় এবং আরো ২ জন পঙ্গু হয়।
পেট্রোলের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন এমন এক ব্যবসায়ি বিশ্বনাথ পুরান বাজারস্থ মেসার্স রহমান এন্ড কো. মালিক নুরুল ওয়াছে আলতাফির সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, এমন কাজ সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে সিলেটের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আলিম উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, এর আগে এমন কোন অভিযোগ পাইনি। শীঘ্রই ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ইন্সপেক্টর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বনাথে হাতেগুনা কয়েকটি দোকানে লাইসেন্স রয়েছে। আর গ্রাস সিলিন্ডার কেউ চাইলের বিক্রি করতে পারবেনা। যারা আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন (ইউএনও) ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুসরাত জাহান জানান, অবৈধভাবে যারা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানার ওসি গাজি আতাউর রহমান জানান, এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ। ইউএনও স্যার বললেই অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন