শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হাইপ্রেসার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলন প্রস্তুতি

গ্যাস সেক্টরের বর্তমান হাল

খ. আ. ম. রশিদুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

তরল সোনা প্রাকৃতিক গ্যাস। জ্বালানী অন্যতম উপাদান। সকল স্থানেই এর কদর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে এর বিশাল মজুদ। মাটিরতলদেশে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস ৬ দশক ধরে চলছে বিরামহীন উত্তোলণ। ১৯৬০ এর প্রথমদিকে ব্যবহারযোগ্য মূল্যবান এই জ্বালানীর উত্তোলণ শুরু। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এর চাহিদা। বিজিএফসিএল (বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোঃ লি) পূর্বাঞ্চলের এ গ্যাস ক্ষেত্রগুলো তদারকি করছে। বিজিএফসিএল অন্তত অর্ধশত উৎপাদনযোগ্য গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলণ করছে। এর মধ্যে ১০টি কুপের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। উৎপাদনে থাকা বেশ কটি কুপের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। কোনটিতে কমছে উৎপাদন, কোনটিতে বাড়ছে পানি। মোট কথা সন্তোষজনক নয় উৎপাদন পরিস্থিতি। এর প্রভাব পড়েছে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে।
সূত্র জানিয়েছে, অস্বাভাবিক পানি উঠায় বন্ধ করতে হয়েছে তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের ২৪নং কূপ। তিতাস লোকেশনের ঘাটুরায় অবস্থিত কুপটিতে বেশকিছু দিনে ধরে অতিমাত্রায় পানি উঠায় কর্তৃপক্ষ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বন্ধ করার আগে এর উৎপাদন ছিল ৫/৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আশ্চর্যজনক হল এ পরিমান গ্যাস উঠতে থাকায় এ কূপের পানি প্রবাহ ছিল ৫০ ব্যারেল। এক ব্যারেল ১৫৯ লিটার। সে হিসেবে এ কূপ থেকে ৭ হাজার ৮শ’ লিটার পানি উত্তোলন হয়। সূত্র জানায়, এ কূপের ফ্লো বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে আশপাশের ২টি কূপের ফ্লো কমে যায়। তাই বাধ্য হয়ে এটিকে বন্ধ করতে হয়েছে। তবে আশপাশের ১১ ও ১২নং ক‚পের উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। এই পরিমান পানি যে কোন কূপের জন্য ভয়ানক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর সন্তোষজনক মনে হলে কূপটির ওয়ার্কওভার কাজ শুরু করা সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে গ্যাস সেক্টরে। এ সেক্টরের অচলায়তন ভেঙে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে কমপ্রেসার স্টেশন। এর মাধ্যমে উৎপাদন পরিস্থিতি ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বালানি সংকট অনেকটা কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিতাস, বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রসহ বিজিএফসিএল’র নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কূপগুলোর উৎপাদন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হ্রস বৃদ্ধি হওয়ায় এবং অস্বাভাবিক পানি উঠানামা করায় নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রের হাইপ্রেসার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডেপথ জোন বা অগভীর গ্যাস কূপ অনুসন্ধান করে গ্যাস উৎপাদন ব্যবস্থায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা চলছে। এর জন্য প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম অবস্থায় তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের পৃথক দুটি অগভীর গ্যাসকূপ অনুসন্ধান কাজ চালানো হবে। সফল হলে পরবর্তীতে সর্বত্রই চলবে এর কাজ। আগে লোয়ার ও আপার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলণ হলেও এখন হাইপ্রেসার জোন বা ডেপথ জোন থেকে গ্যাস উত্তোলণ চালানো হবে। বর্তমানে বিজিএফসিএল’র কূপগুলো সর্বোচ্চ ৪ হাজার মিটার মাটির তলদেশ থেকে গ্যাস উত্তোলণ চলছে। নতুন প্রক্রিয়ার ৭ সাড়ে ৭ হাজার মিটার মাটির তলদেশ থেকে গ্যাস উত্তোলণ করা হবে। থ্রিডি সার্ভের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড বা জিডিএফ এই প্রকল্পে অর্থের যোগান দেবে। গ্যাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপ্রেসার জোন বা অগভীর গ্যাসক‚পে গ্যাস পাওয়া গেলে জ্বলানী খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। বদলে যাবে দেশের জ্বালানি খাত। কাজটি তত্ত্বাবধান করবে বাপেক্স। অন্যদিকে, বিজিএফসিএল-এর বিভিন্ন কূপ থেকে প্রতিদিন ৬৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এসব কূপ থেকে ৮৫১ ব্যারেল পানি উৎপাদন হচ্ছে। পানি প্রবাহের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চিন্তিত। তবে এ সমস্য সামাধানে তিতাস লোকেশনসহ বিভিন্ন গ্যাস জোনে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি কমপ্রেসার স্টেশন বসানো হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক মো. সাহেদুল ইসলাম জানান। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌফিকুর রহমান তপু বলেন, ডেপথ জোনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ভান্ডার রয়েছে বলে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের আলোকেই অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হবে। তবে এ ক্ষেত্রে চলতি উৎপাদনযোগ্য গ্যাস ক‚পগুলোর গ্যাসের স্ট্রাকচারাল (অবকাঠামোগত) সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন