বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ’জাওয়াদ’ সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে তাতে সামগ্রিকভাবে কৃষির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া কৃষি অঞ্চলের রিপোর্ট মোতাবেক এই ৪ জেলায় রোপা আমন ধানের ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৪ জেলায় মোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির রোপা আমনের মধ্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৯ হেক্টর জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রস্তুতি চলছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ।
সূত্র মোতাবেক, বগুড়ায় ৯ হাজার ২১২ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ১৯৩ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর , পাবনায় ২ হাজার ৭৩২ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ৬৪০ হেক্টর এবং সিরাজগঞ্জে ৬ হাজার ৯২৯ হেক্টরের বিপরীতে ৩ হাজার ১৩ সহ মোট ২২ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির টার্গেটের বিপরীতে ৯হাজার ৭০৭ হেক্টরে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মোট বোরো বীজতলা তৈরীর শতকরা হার ৪৩।
বগুড়া কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ি চলতি রবি মওশুমে (শীতকালীন ) বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪৪ হাজার ৬৩৮ হেক্টরে শাকসবজি, ৯২ হাজার ৪৯৭ হেক্টরে আলু, ৮ হাজার ৬৫৭ হেক্টরে মরিচ, ৯ হাজার ৯৯৫ হেক্টরে পেঁয়াজ, ১১ হাজার ২৯৮ হেক্টরে রসুন, ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৪২ হেক্টরে সরিষাা, ৩ হাজার ৪০০ হেক্টরে চিনাবাদাম, ১৭ হাজার ৫১৩ হেক্টরে ভুট্টা, ১৭ হাজার ৬৪০ হেক্টরে মসুর ডাল, ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টরে খেসারি, ৮৫ হেক্টরে কেশর আলু, ২৩ হাজার ২১৩ হেক্টরে গম, ১ হাজার ৬৩০ হেক্টরে মিষ্টি আলু, মাত্র ২৭ হেক্টরে তিশি ও ৬ হেক্টরে ছোলা, ২১৫ হেক্টরে তিল, ১৫১ হেক্টরে সুর্যমুখি, ১১ হেক্টরে মুগডাল, ৬২৫ হেক্টরে মটরদানা, ৩৯৮ হেক্টরে কালোজিরা, ৩৫ হেক্টরে তুলা, ৩৭ হেক্টরে মৌরী, ১৫৯ হেক্টরে যব, ৬২৮ হেক্টরে আখ এবং ৬১৫ হেক্টরে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জাওয়াদ সৃষ্ট কারণে যে ধুলি ভেজা বৃষ্টি হয়েছে তাতে বগুড়ায় চাষাবাদে কোনো ক্ষতির কারণ না হয়ে বরং উপকার বয়ে এনেছে। তবে সামান্য বৃষ্টি চরাঞ্চলের ফসলের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। শীতের শুরুতে বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে শিগগিরই শীত না বাড়লে আলু, সরিষা এবং গম জাতের ফসলের ফলনে কিছু বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে ।
বিশিষ্ট কীটতত্ববিদ জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, মেঘলা আবহাওয়া থাকলে আলুর জমিতে ফাংগাস সংক্রমণের ঝুঁকি ছিল। এখন আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় সেই আশঙ্কা আপাতত নেই।
বগুড়া সদর গাবতলী ও শিবগঞ্জ এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষান কিষানীরা আলু এবং শাকসবজীর জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত। চাষি আমির আলী বলেন, তিনি তার ১ বিঘা জমিতে একই সাথে আলু ও কুমড়া রোপন করেছেন। আলুর বয়স ৭০ দিন হলে তিনি আলু তুলে জমির মাটি লেভেল করে দেবেন। ততদিনে তার জমিতে লাগানো কুমড়ো গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করবে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন