পাঁচ বছর পর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ সুপারিশ করেছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে তিনটি শর্ত ধারাবাহিকভাবে পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে, মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতার মান উন্নয়ন। জাতিসংঘের কারিগরি কমিটি সিডিপি এ মূল্যায়ন করে থাকে। প্রতি তিন বছর পরপর এর মূল্যায়ন হয়। এ হিসেবে, বাংলাদেশ তিনটি শর্ত পূরণের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হলে বিশ্বে মর্যাদার দিক থেকে আমরা একটি ধাপ অতিক্রম করব। তবে আক্ষরিক অর্থে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো কিনা, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে। তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। বিশেষ করে রফতানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি। উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হলে এ সুবিধা থাকবে না। শুধু বাড়তি শুল্ক-কর আরোপের কারণে প্রতি বছর ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার প্রাপ্তি কমতে পারে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিওটিএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আরও নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। প্রথমত ২৬ সাল পর্যন্ত তিনটি শর্তের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে বা উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো ধরনের বিপর্যয়ে এ শর্তের অবনমন ঘটলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পিছিয়ে যেতে পারে। যেমন ২০০৩ সালে মালদ্বীপকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ। সুনামির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা ৯ বছর পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালে নেপালের উত্তরণের কথা ছিল। ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে তা ৩ বছর পিছিয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলেও তা আমরা মোকাবেলায় অনেকটাই সক্ষমতা অর্জন করেছি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে রয়েছে সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির ব্যাপকতা। এ দুটির ক্ষেত্রে উন্নয়ন এখন পর্যন্ত হয়নি, বরং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক্ষমতাবানদের দুর্দ- প্রতাপ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি একটি শ্রেণীর লোকের দুর্নীতি সীমাছাড়া হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ অনেকটা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। করোনায় কোটি কোটি মানুষ বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ পরিস্থিতি থেকে আগামী ৫ বছরে উন্নয়ন কতটা ঘটবে, তাই দেখার বিষয়।
দুই.
বিগত এক দশকে দেশের উন্নতি যে হয়নি, তা নয়। মনুমেন্টাল বা স্থাপনাগত বেশ উন্নতি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন কতটা হয়েছে এবং হচ্ছে? উন্নয়নটা কি সার্বিক, নাকি গোষ্ঠীগতভাবে হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, উন্নয়নটা গোষ্ঠীগতভাবে হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ যখন দেখে তার চারপাশের কিছু মানুষের শনৈশনৈ উন্নতি হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের জীবন চালাতেই প্রাণপাত করতে হচ্ছে, তখন বোঝা যায় উন্নতিটা একপেশে হয়ে গেছে। এই করোনায় অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততার মধ্যেও একটি শ্রেণীর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষের। করোনায় কোটিপতির অ্যাকাউন্ট প্রায় দশ লাখ বৃদ্ধি পেযেছে। এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। বলা বাহুল্য, সরকার এই শ্রেণীর মানুষের উন্নতিকেই দেশের উন্নয়ন হিসেবে বড় করে দেখছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ উন্নয়নের এক ইন্দ্রজালে আটকে পড়েছে। তারা যতই দুঃখ-কষ্টে থাকুক, সরকার এ কথা কিছুতেই মানতে চায় না। বরং এ কথাই শুনতে চায়, তারা মহাসুখে এবং মহানন্দে আছে। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে খুবই বিপাকে পড়েছে। অথচ উন্নয়ন হওয়ার কথা সমহারে, সুষমভাবে। অনেকটা পিরামিড আকারে। নিচ থেকে উন্নতি হতে হতে উপরের ধনিক শ্রেণী পর্যন্ত। অন্যদিকে, ধনিক শ্রেণীর অর্থ ও বিনোয়েগ নিচের দিকে ধাবিত হবে। তা না হয়ে উন্নতির চিত্রটি হয়ে গেছে উল্টো-পিরামিডের মতো। ধনিক শ্রেণী ফুলেফেঁপে উঠেছে, সাধারণ মানুষ ক্রমেই শুকিয়ে চোঙ্গাকৃতির মতো চুপসে যাচ্ছে। উন্নতিটা এখন এভাবেই হচ্ছে, যেখানে সমতা বা সুষম হার বলে কিছু নেই। ভাবা যায়, জাপানের মতো উন্নত দেশে শতকোটি ডলারের মালিক মাত্র ২৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭৫ জন। এমনকি ভারতে ১৫৩ জন। অথচ স্বল্পোন্নত হিসেবে আমাদের দেশে এ সংখ্যা শতাধিক বা তার চেয়ে বেশি। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আমাদের দেশের একশ্রেণীর মানুষ কীভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে। অন্যদিকে, সিংহভাগ মানুষ দরিদ্র অবস্থায় রয়েছে। তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে সরকার হয়তো বলতে পারে, মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলার বলে সরকার ঘোষণা দিয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী তো বলেই ফেলেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি বড়লোক হয়ে গেছি। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এ কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে মাথাপিছু আয়ের মধ্যে যে শুভংকরের বিশাল একটা ফাঁক রয়েছে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন। তারা বলেছেন, দেশে যে প্রায় চার কোটির বেশি বেকার রয়েছে, তাদের আয় হচ্ছে কিভাবে? যে বেকার, তার আয় ২৫৫৪ ডলার হয় কি করে? অর্থনীতিবিদদের এ কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, মাথাপিছু আয়ের বিষয়টি ‘হাওয়াই মিঠাই’ ছাড়া কিছু নয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের একটি কথা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘মাথাপিছু আয়ের হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। এর পরের স্তর হচ্ছে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এ স্তরে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। অথচ বাংলাদেশ যে মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলছে, তার আন্তর্জাতিক কোনো মানদ- নেই। এটা বাংলাদেশেরই তৈরি।’ অর্থাৎ সরকার কাগজে কলমে যা ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছে, তাই ধরে নেয়া হচ্ছে। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি বা মানদ- নেই। মানদ- হচ্ছে, সরকারের ঘোষণা বা ইচ্ছা। আমরা যদি মাথাপিছু আয়ের কথা বিবেচনা করি, তাহলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ বা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে মাথাপিছু গড় আয় হতে হবে ৪ হাজার ডলারের বেশি। এখন এই আয় ২৫৫৪ ডলার বলা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে তা দ্বিগুণ করা কি সম্ভব? যেহেতু কোনো মানদ- নেই এবং সরকার তার ইচ্ছা মতো ঘোষণা করে দিতে পারে-এ হিসাবে তা সম্ভব। আগামী বছরই যদি মাথাপিছু আয় ৪ হাজার হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়, তাহলে তার হিসাব কে করতে যাবে? মানুষ কেবল শুনবে তার মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলার হয়েছে। আর পকেট হাতড়ে ডলার খুঁজবে। কোটি কোটি বেকার রেখে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত কিনা, তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হয়ে যাবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ চিন্তা করা খুবই কষ্টকর। আমরা ভাল করেই জানি, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দাবস্থা চলছে। শিল্প কারখানা চালু হওয়ার পরিবর্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। করোনা বেকার এবং দরিদ্র সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকে নিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে কীভাবে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো? আর উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কি রাতারাতি বদলে যাবে? তাদের জীবনমান কি ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে? বিশ্লেষকরা কিছুদিন এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করবে, তারপর থেমে যাবে। সাধারণ মানুষের জীবনের টানাপড়েন যে বদলাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অন্যদিকে, সরকার তার উন্নয়নের ঝা-া উড়িয়ে বলবে, আমরা উন্নয়নশীল দেশে বা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি।
তিন.
দেশের উন্নয়ন কতটা এবং কিভাবে হচ্ছে, এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থাপনাগত উন্নয়ন হলেও মানুষের জীবনমানের যে অবনতি ঘটেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্থাপনাগত উন্নয়ন দিয়ে সরকার হয়তো বাহবা নিতে পারে। তবে মানুষের যদি জীবনমানের অবনমন ঘটতে থাকে, তবে তাকে প্রকৃত উন্নয়ন বলা যায় না। দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন। জীবনমানের ব্যবধান যদি আকাশ-পাতাল হয়, তবে সরকারের উন্নয়নের ফানুস চুপসে যেতে বেশি সময় লাগবে না। সরকারের মধ্যে এমন আত্মতুষ্টি রয়েছে, যেসব উন্নয়ন হচ্ছে তার সবই সে করেছে। বস্তুত সরকারের একার পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি উদ্যোগ। সরকারি উদ্যোগে রাস্তা-ঘাট আর কিছু বড় প্রকল্প বা স্থাপনা নির্মাণ করলে চেহারা ভাল দেখা যায় ঠিকই, তবে তা সার্বিক উন্নয়নের প্রতীক নয়। দেশের মানুষের অর্থনীতির কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে, স্বচ্ছন্দে চলার মতো আর্থিক সঙ্গতি সাধারণ মানুষের নেই। খুবই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। একদিক টান দিলে, অন্যদিক উদাম হয়ে যাওয়ার মতো তাদের অবস্থা। যদি এমন হতো, মানুষ তার অভাব মিটিয়ে জীবনযাপন করে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছে, তাহলে সেটাই হতো উন্নয়নের মূল সূচক বা সাসটেইনঅ্যাবল ডেভালপমেন্ট। এখন অবস্থা অনেকটা এমন, সরকার কিছু মানুষের উন্নতিকে সূচক হিসেবে ধরে উন্নয়নের কথা বলছে। অর্থনীতির হিসাবে, বাংলাদেশ হয়তো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তবে কতটুকু উন্নয়নগতি নিয়ে বের হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন। শঙ্কার বিষয়টি এখানেই। দেখা যাবে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে বাংলাদেশ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সুদবিহীন বা ন্যূনতম সুদের বিনিময়ে যে ঋণ ও সহযোগিতা পেত, তা আর পাবে না। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে রফতানি ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ ও সহায়তা কম পাওয়া যায়, পেলেও তার সুদের হার বেশি হবে। এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে বিশ্বের সব দেশগুলোর উন্নতি নিয়ে তিনটি শ্রেণীতে একটি তালিকা করে। শ্রেণী তিনটি হচ্ছে, স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল এবং উন্নত। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ ও সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ তালিকায় বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশ তালিকায় ঠাঁই পায়। ২০১৫ সালে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ তালিকা থেকে বের হতে বাংলাদেশের সময় লেগেছে প্রায় ৪৫ বছর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হতে যে তিনটি শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি। বাকি দুটি সূচক মানব সম্পদের উন্নয়ন (৬৬ পয়েন্টের মধ্যে ৬৩) ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি (৩৬ পয়েন্টের মধ্যে ৩৩) কমানোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জন করেছে। যদিও এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়নের সূচক নির্দেশ করা কঠিন। তারপরও কাগজে-কলমের হিসাব দেখিয়ে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। আমরা বলছি না, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশে পরিণত হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ শ্রেণীতে উঠার জন্য যে টেকসই উন্নয়ন দরকার, তা হচ্ছে কিনা? বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিলে, এ ধরনের উন্নয়ন গতি অত্যন্ত ধীর হিসেবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সুশাসন ও দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকগুলো লুটপাটের শিকার হয়েছে। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার হওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ত্রাহি অবস্থা। অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবার নিম্নবিত্তে পরিনত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশ প্রকৃত অর্থে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হওয়ার ঘোষণা আনন্দের হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অনেকটা শুভংকরের ফাঁকি হয়েই থাকবে।
চার.
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে উন্নতি করতে চায় না। তবে উন্নতি করতে চাইলেও সবাই তা পারে না। সক্ষমতার একটা পর্যায় পর্যন্ত থেমে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করতে পারে রাষ্ট্র ও সরকার। এখন সরকার যদি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের ফাঁকা হিসাব দেখায়, তবে তাদের উন্নতির ফোকড়ে পড়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তার কথা বলারও উপায় থাকে না। সরকার যখন কঠোর হয়ে উঠে এবং জনগণকে দাবিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার সাথে অন্য কোনো শক্তি কুলিয়ে উঠতে পারে না। জনগণের সাথে সরকারের আচরণ অনেকটা এরকমই হয়ে উঠেছে। সরকার কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করতে চায় না, চাচ্ছে না। কোনো সরকার যদি এমন উদাসীন হয়, তাহলে জনগণের দুর্ভোগ ও দুর্দশা সীমাছাড়া হয়ে যায়। এখন এ অবস্থাই চলছে। সরকার এখন উন্নয়নের পেছনে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। এই দৌড়াতে গিয়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক তা বাস্তবে থাকুক বা না থাকুক, বাড়িয়ে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। উন্নয়নের ফানুস উড়ানোর এই নীতির মাধ্যমে আর যাই হোক টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে ঠিকই, তবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা যে তিমিরে রয়েছে, সে তিমিরেই থেকে যাবে।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন