চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ইউএনও’র কার্যালয়ের সিএ টু (গোপনীয় সহকারী) তেজেন্দ্র কুমার দেবনাথকে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা আদায় করেছে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী একটি চক্র। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। মুক্তিপণ আদায় শেষে তার চোখে মরিচের গুড়া দিয়ে মহাসড়কের পাশে ফেলে যায় দুষ্কৃতিকারীরা ।এদিকে ভুক্তভোগী তেজেন্দ্র কুমার দেবনাথ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে তিনি সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড থেকে ফেনী যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি মাইক্রো বাসে উঠলে ভেতরে থাকা যাত্রীবেশী ৬-৭ জন অপহরণকারী চক্র তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে চেপে ধরে ।এরপর তারা তার নাম পরিচয় জানতে চায় এবং তিনি ইউএনও কার্যালয়ে চাকুরি করেন জানতে পেরে তারা ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। এত টাকা কিছুতেই দেওয়া সম্ভব নয় জানানোর পর তারা দরকষাকষির এক পর্যায়ে তিন লক্ষ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে।এরপর তার উপর অত্যাচার শুরু করে অপহরণ চক্রটি। এতে তিনি বাধ্য হয়ে তেজেন্দ্র দেবনাথ তার স্ত্রীর কাছে ফোন করেন এবং যেকোন উপায়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। এতে তার স্ত্রী ও ভাই বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা ধার চেয়ে অপহরণকারীদের দেওয়া ০১৮৮৩৫৫৮২২১ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা, ০১৮৮৭৪৬৬০৯৭ নম্বরে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ০১৭৬৬২৩৬৮৪২ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা, ০১৩১৭১৯০৬৯৭ নম্বরে ২৫ হাজার টাকা এবং ০১৯৯৮৬০৫০৯৭ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা দেন তিনি। অপহরণকারীরা তাকে গাড়িতে রেখেই বাইরে থাকা তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের ফোন করে টাকাগুলো তুলে নেওয়া নিশ্চিত করার পর আরো কিছুক্ষন তাকে মাইক্রোতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শেষে রাত ১০টার দিকে ফেনীর লালপোল এলাকায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে তার চোখে মরিচের গুড়া মেখে দিয়ে তাকে মহাসড়কের পাশে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায়। পরে বহুকষ্টে তিনি কোনরকমে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তেজেন্দ্র দেবনাথ আরো জানান, গলায় গামছা দিয়ে টানাটানি ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে বর্তমানে তিনি আহত অবস্থায় বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হয়ে এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। ঘটনার বিষয়ে সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তেজেন্দ্র বাবু আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। আর তিনি সুস্থ হয়ে আসলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাকে তিনি এখনো কিছু জানায়নি। তিনি সুস্থ হয়ে আসুক আগে। কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেব আমরা। প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের অলংকার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মাইক্রোবাস ও হায়েছ নিয়ে যাত্রীদের তুলে তাদের অপহরণ করে এ রকম মোটা অংকের অর্থ আদায় করে আসছে বলে বিভিন্ন সময় শোনা যায়। এতে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে অনেক মানুষ। কিন্তু অপহরণ চক্রের সদস্যরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে এ ধরণের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন