কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়েও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি সদ্য পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা। এর পর তাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠান তারা।
গত সেপ্টেম্বরেই কানাডায় গিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে ঘটনার চিত্রই পাল্টে গেল। প্রশ্ন উঠেছে— মুরাদ হাসানকে কেন আটকে দিল বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি? কার বা কাদের দাবিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডা বিমানবন্দর প্রশাসন? জানা গেছে, কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই। প্রবাসীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’।
সংগঠনটির সংগঠক ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, কানাডায় সব কিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক। অনিয়মের দেখা মিলবে না এ দেশে। মুরাদ হাসানের কানাডা আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশে মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা বিস্তারিত লিখি। এর সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিই। শুনেছি আমাদের মতো এমন ১৭১ ইমেইল নাকি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের।
আমাদের বিশ্বাস, এসব ইমেইলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কানাডা প্রশাসন। মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে এটি কাজে দিয়েছে। অবশ্য ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্নকথা। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়।এদিকে মুরাদকে টরেন্টো বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এখনও কিছুই জানায়নি বলে তথ্য দিয়েছেন কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলীলুর রহমান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে কানাডায় প্রবেশে তারা বাধা দেয়, এমপি হোক বা সাধারণ নাগরিক হোক অর্থাৎ যে কোনো ব্যাপারে কোনো ঝামেলা হলে তারা জানায় আমাদের। কিন্তু মুরাদ হাসানের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি তারা। কানাডায় ঢুকতে না পেরে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসে আছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো জামালপুর-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য।
কানাডায় মুরাদ হাসানকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তথ্য নিশ্চিত করে কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার নিউজ পোর্টাল বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল— সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি। টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। কানাডায় বসবাসরত তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে কানাডার সরকারি সূত্র থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে গুঞ্জন ওঠে মুরাদ হাসান মন্ট্রিয়ালে তার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। পরে জানা যায়, কানাডায় ঢুকতে না পেরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে এখন ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করছেন।
বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ডা. মুরাদ হাসান কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু যেতে পারেননি। আমাদের কাছে খবর আছে তিনি দুবাইয়ে আছেন। কাল দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসার কথা। তার দুবাইয়ের ভিসাও নেই, সে কারণে সেখানে থাকতে পারছেন না। আমি শুনেছি তিনি চলে আসছেন দেশে। এদিকে ডা. মুরাদ দুবাই থেকে সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটের ফ্লাইটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের (ইকে-৫৮২) বিমানে দেশে ফিরছেন এমন খবরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা ভোর থেকেই ভিড় করেন। সবশেষে দেশেই আসতে হলো তাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন