সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : সদ্য শেষ হওয়া পৌর নির্বাচনের আমেজ না কাটতেই কুমিল্লার গ্রামগঞ্জে শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচন কমিশন সূত্রে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। আর তাই গ্রামের তৃণমূলের রাজনীতিতে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে আবারও মুখোমুখি হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ তৃণমূলের রাজনীতি। কুমিল্লার ১৬ উপজেলার ১৮৬টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। এদিকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ২টি ইউনিয়নে দীর্ঘ এক যুগ পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন খুশিতে আত্মহারা সম্ভাব্য প্রার্থী ও ভোটাররা। কুমিল্লায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের আগাম প্রচারণায় সরগরম হয়েছে প্রতিটি গ্রাম। হাট-বাজার-গঞ্জের চা স্টল থেকে শুরু করে সব দোকান-পাটেই ইউপি নির্বাচনের খবর চাওর হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আগাম প্রচারণায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা শুভেচ্ছা অভিনন্দন দিয়ে ঝুলিয়েছেন ব্যানার, ফেস্টুন। আবার কোন কোন ইউনিয়নে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ, মিছিল। এছাড়াও কেউ কেউ স্থানীয় পত্রিকায় সাক্ষাতকার, বিজ্ঞাপন দেয়ার কৌশলও নিয়েছেন। তফসিল ঘোষণা না হলেও আগাম প্রচারণায় মাঠ থেকে দলীয় প্রতীক বাগিয়ে আনার চেষ্টায় লবিং. তদবিরও চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। এ ধরনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকা-ে বেশি বেশি অংশগ্রহণ ও সক্রিয় থাকার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে কথা বলে জানা গেছে, আ.লীগ বর্তমান চেয়ারম্যানদের প্রাধান্য দেবে ঠিকই। পাশাপাশি দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয়, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিকেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। অপরদিকে একই বিষয়ে উপজেলা বিএনপি নেতারা মনে করেন, পৌর নির্বাচনে কুমিল্লায় ভরাডুবির কারণে ভেবে-চিন্তে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই দল মনোনয়ন দেবে। কুমিল্লা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় ১৮৬টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তারমধ্যে বরুড়া উপজেলার একটি ইউনিয়নে নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এ জেলায় ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ। এদিকে বুড়িচং উপজেলার ৮নং ভারেল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিগত ২০০৩ সালে। পরে ওই ইউনিয়ন ভারেল্লা উত্তর এবং দক্ষিণ ইউনিয়নে বিভক্ত করায় বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাই মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় ১২ বছর আটকে থাকে নির্বাচন। সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে নবগঠিত ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে। প্রায় এক যুগ পর নির্বাচন হবে ওই দুটি ইউনিয়নে। তাই অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে ভোটের আমেজ ওই দুই ইউনিয়নে সবচে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণায় রয়েছে ভিন্নমাত্রা। ইউনিয়ন দুটি ঘুরে জানা গেছে, ভারেল্লা (উত্তর) ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আলিফ রায়হান হামিদ, দেলোয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম মাস্টার, আবুল হোসেন, আবু কাউছার খান। তবে সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী মো. আলিফ রায়হান হামিদ। আওয়ামী লীগ থেকে ব্যবসায়ী হামিদের মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ইউনিয়নে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন মিজানুর রহমান ও মজিবুর রহমান। অপর দিকে ভারেল্লা (দক্ষিণ) ইউনিয়নে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন ব্যবসায়ী শাহ পরান আজাদ, ওমর ফারুক, নাসির উদ্দিন ভূইয়া। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জসিম উদ্দিন মেম্বার, বেলায়েত হোসেন ও ফরিদ উদ্দিন মেম্বার। কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত কোন প্রকার কাগজপত্র কিংবা অফিসিয়াল কোন অর্ডার নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো আসে নাই। তবে যথাসময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে জেলার হাল নাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকাসহ আগাম সকল প্রস্তুতিই জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কমিশন সম্পন্ন করে রেখেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন