বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাবি শিক্ষার্থী গৃহবধূ হয়ে বনানী যাওয়ার পর খুন!

স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:১০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৪) মৃত্যুর ঘটনায় কানাডা প্রবাসী স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ইফতেখারকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া বলেন, ইলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী গত মঙ্গলবার রাতে ৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন (৩৬) এবং শ্বশুর মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিন। পলাতক ইফতেখারের বাবা-মাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ বলছে, ইলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে ইলমার সঙ্গে ইফতেখারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইফতেখার ও তার মা-বাবা ইলামাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলেন। ইলমা পড়া বন্ধ করতে না চাওয়ায় ইফতেখার ও তার মা-বাবা মিলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়।

বিয়ের তিন মাস পর ইফতেখার কানাডায় চলে যান। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি ফিরে আসেন। তিনদিন পর গত মঙ্গলবার ইলমার মায়ের মোবাইল ফোনে কল করে ইফতেখার জানান, তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। তারা যেন হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে গিয়ে ইলমার বাবা সাইফুল চৌধুরী আসামিদের সন্দেহজনক আচরণ দেখে মেয়ের লাশ ভালো করে দেখেন। তিনি দেখতে পান ইলমার নাক, ওপরের ঠোঁট, পিঠের ডান পাশ, বাঁম কানসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে ইলমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ছুটে যান তার সহপাঠী এবং শিক্ষকরা। সহপাঠী মজিদা নাসরিন মম বলেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হলে থাকতো ইলমা। বিয়ে পর থেকে বনানী শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। গত সেপ্টেম্বরে তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়। একটি পরীক্ষা দিতে এসেছিল। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা শুনেছি, তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না। প্রতিনিয়ত সন্দেহ করতেন ওকে।

তিনি আরও বলেন, এমনকি ফোন দিলেও শাশুড়ি রিসিভ করতেন। আমরা ওর শরীরে আঘাতগুলোর চিহ্ন দেখেছি। ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলেছেন, ও আত্মহত্যা করেছে। ইলমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নৃত্যকলা বিভাগের প্রভাষক তামান্না রহমান বলেন, আমরা ইলমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। এটা কোনোভাবেই আত্মহত্যা বলে মেনে নেয়া যায় না। আমি শুনেছি, ইলমা যখন গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তখন ওর সঙ্গে একজন বডিগার্ড ছিল। কতটা অবিশ্বাস এবং সন্দেহ করতো তাকে।

এদিকে, এ ঘটনায় হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে ইলমার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবি ইলমা চৌধুরীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি করেন তারা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Zubayer MD ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
সবই মানলাম, খুনের বিচার হওয়া উচিৎ, কিন্তু একজন স্বামী বিয়ের পর কারন ছাড়া কেনো স্ত্রীর সাথে এমন করবে? এটা নিয়ে কারো কোনো কথা নাই, নাকি নারীরা কোনো অপরাধে জড়ায়ই না?
Total Reply(0)
Nafis Jahan Joarder ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
মেয়েটার বাবা মা কি করেছেন এই ছয়মাস? নাকি কানাডা প্রবাসী ছেলে পেয়ে বর্তে গেছেন ওনারা! মেয়েকে বিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মেয়ের খোঁজ খবর রাখতে হয়। আর বিশেষ করে সেই সমাজে যেখানে নারীরা প্রায়শই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। মেয়ে বিয়ে দিলেই বোধহয় অনেক পিতামাতার মুক্তি মেলে?
Total Reply(0)
Showkat Ali ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৭ এএম says : 0
লোভ মানুষকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। বনিবনা না হলে শেষ অপশনই ভাল। এখানে ছেলে মেয়ের যথেষ্ট বয়স হয়েছিল.. । সংসার কেবল সমঅধিকারের ভিত্তিতেই হয়। দয়া অনুগ্রহে সংসার হয় না। সত্য উদঘাঠিত হোক । আবার ছেলেরা বিয়ে করে জেল খাটার জন্য না এটাও ভাবতে হবে। যারা মামলা মোকদ্দমার মধ্যে পড়ে তারা বুঝে কেমন লাগে.. ।
Total Reply(0)
Riyad Mahmud ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
যে মেয়ে ঢাকা ভার্সিটি তে পরে সে তো অবুঝ শিশু না , আশা করি তারা পরিবার ও দ্বায়িত্বশীল, সেই মেয়েকে এতোদিন ধরে শারিলিক ও মানুষকিক ভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছে, আর সেই মেয়ে বা তার পরিবার এতোদিন কোন ব্যাবস্থাই নিলো না,কেনো তারা পুলিশ কে জানালোনা,বা ছেলের পরিবার বা ছেলে যদি খারাপ হতো তাহলে সে ডিভোর্স দিতে পারতো,আর এখন কতো কাহিনী শুরু করেছে,বর্তমান এই সভ্য যুগে এটাও কি মানা যায়, আমর কাছে মনে হয় সেই মেয়ে হয়তো বা হতে পারে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, ছেলের ও উভয়ই পরিবারের।
Total Reply(0)
ন য় ন ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৮ এএম says : 0
নিঃসন্দেহে এটি জঘন্য পাশবিক হত্যার ভয়াবহ চিত্র, যার কঠোর থেকে কঠোরতর বিচার এর দাবি জানাই। আর বিচারহীনতার প্রবনতাই যেকোনো ঘটনা থেকে হত্যা পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে পারে, এটাও এর ব্যতিক্রম নয় বলে মনে হয়। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে আত্মাহংকার, অতিউচ্চাভিলাসী, অতি স্ট্যাটাস না দেখে ভাল মানষিকতার মানুষ নির্বাচন করে সুখ কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Manzila Mony ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪৯ এএম says : 0
এমনই হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কাছের কাউকে বলতে গেলে উল্টো মানিয়ে চলার পরামর্শ পাওয়া যায়। কেউ কেউ তো আবার বলেই বসেন স্বামী এমন করছে মানে বেশি ভালোবাসে তাই।হাস্যকর যুক্তি। ফলস্বরুপ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন