ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৪) মৃত্যুর ঘটনায় কানাডা প্রবাসী স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ইফতেখারকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া বলেন, ইলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী গত মঙ্গলবার রাতে ৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন (৩৬) এবং শ্বশুর মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিন। পলাতক ইফতেখারের বাবা-মাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ বলছে, ইলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে ইলমার সঙ্গে ইফতেখারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইফতেখার ও তার মা-বাবা ইলামাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলেন। ইলমা পড়া বন্ধ করতে না চাওয়ায় ইফতেখার ও তার মা-বাবা মিলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়।
বিয়ের তিন মাস পর ইফতেখার কানাডায় চলে যান। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি ফিরে আসেন। তিনদিন পর গত মঙ্গলবার ইলমার মায়ের মোবাইল ফোনে কল করে ইফতেখার জানান, তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। তারা যেন হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে গিয়ে ইলমার বাবা সাইফুল চৌধুরী আসামিদের সন্দেহজনক আচরণ দেখে মেয়ের লাশ ভালো করে দেখেন। তিনি দেখতে পান ইলমার নাক, ওপরের ঠোঁট, পিঠের ডান পাশ, বাঁম কানসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে ইলমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ছুটে যান তার সহপাঠী এবং শিক্ষকরা। সহপাঠী মজিদা নাসরিন মম বলেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হলে থাকতো ইলমা। বিয়ে পর থেকে বনানী শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। গত সেপ্টেম্বরে তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়। একটি পরীক্ষা দিতে এসেছিল। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা শুনেছি, তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিতেন না। প্রতিনিয়ত সন্দেহ করতেন ওকে।
তিনি আরও বলেন, এমনকি ফোন দিলেও শাশুড়ি রিসিভ করতেন। আমরা ওর শরীরে আঘাতগুলোর চিহ্ন দেখেছি। ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলেছেন, ও আত্মহত্যা করেছে। ইলমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নৃত্যকলা বিভাগের প্রভাষক তামান্না রহমান বলেন, আমরা ইলমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। এটা কোনোভাবেই আত্মহত্যা বলে মেনে নেয়া যায় না। আমি শুনেছি, ইলমা যখন গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তখন ওর সঙ্গে একজন বডিগার্ড ছিল। কতটা অবিশ্বাস এবং সন্দেহ করতো তাকে।
এদিকে, এ ঘটনায় হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে ইলমার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবি ইলমা চৌধুরীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি করেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন