দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলো ফিরে পেয়েছিল প্রাণচাঞ্চল্য। সেই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়ে নুরুল হক নুরু এখন অন্যদের মতোই জাতীয় নেতা হওয়ার পথে। দীর্ঘদিনের বন্ধাত্ব ঘুচে শিক্ষার্থীরা ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন নতুন ধারা অব্যাহত থাকবে প্রতিবছর।
মেয়াদ শেষে আবারও নির্বাচন, নতুন নেতৃত্ব, নতুন করে প্রচার-প্রচারণা, প্রাণ ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়, হল, মধুর ক্যান্টিনসহ পুরো ক্যাম্পাসে। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি নির্বাচন। গত ২০ নভেম্বর ২০২১ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সংস্কৃতি আরো জোরদার করা প্রয়োজন। ডাকসু আয়োজনের জন্য সকল মহলের সহযোগিতা থাকা যেমন প্রত্যাশিত, তেমনিভাবে পুরো জাতীয়ভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার একটি সংস্কৃতি সেটিও আরো শক্তিশালী করা খুব জরুরি। কিন্তু দিন যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন ডাকসুর কথা ভুলতে বসেছে প্রশাসন। প্রশাসনের এসব অযুহাতের নিন্দা জানিয়ে ফের ডাকসুর দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, অনতিবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনকে বলেছি। আমরা মনে করি ডাকসু নির্বাচন দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যদি না থাকে সেক্ষেত্রে প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক সময় তিরোহিত হয়ে যায়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়েছে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে শুভ কাজের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এমন কথা বলে ডাকসু নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তো বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ক্ষমতাসীন সরকারের বলয় থেকে মুক্ত হয়ে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে অবশ্যই ডাকসু দেয়া সম্ভব। আর যদি তারা এই মনোভাব পোষণ না করে তাহলে কোনো পদ্ধতিই কাজে আসবে না। গত ডাকসু নির্বাচনে দেখেছি অনেকেই ভোট দিতে পারেনি। এবারে আমরা চাই একটা গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাসেদ শাহরিয়ার বলেন, ডাকসুর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার দু’বছর অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে। এখনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই। দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর ডাকসু নির্বাচনের আশা ছিল যে এটি নিয়মিত হবে। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ নেই প্রশাসন এই অযুহাতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ক্যাম্পাসে বিদ্যমান দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাবো।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়, কর্মচারী সমিতির নির্বাচন হয় সবার নির্বাচনই হয় কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হয় না। ডাকসু নির্বাচন চেয়ে অনেকগুলো কর্মসূচি করেছি। ডাকসু হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জায়গা থাকে তাই ডাকসু নির্বাচনহীনতার তিন বছর উপলক্ষে ডাকসু নির্বাচন চেয়ে ১০ মার্চ থেকে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করা হবে এবং ১৫ মার্চ এই দাবি তে বট তলায় ছাত্র সমাবেশ করা হবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, করোনাকালে যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বদিচ্ছা থাকলে যে কোন সময় ডাকসু নির্বাচন দেয়া সম্ভব। বিশেষ করে ছাত্রসংগঠনগুলো এ দাবিতে সোচ্চার হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু দিতে বাধ্য হবে। ডাকসু হলে ছাত্র রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। স্বৈরশাসকদের সময়ে ডাকসু নির্বাচন হলেও ৯০ পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে ডাকসুসহ ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর ডাকসু না থাকায় ছাত্ররাজনীতিতে একটা চরম মাত্রায় অধঃপতন হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিতে মেধার পরিবর্তে এখন অর্থ ও পেশিশক্তি প্রাধান্য পাচ্ছে। পরিচ্ছন্ন ছাত্ররাজনীতির স্বার্থে ডাকসু নির্বাচন হওয়াটা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোনো মতামত দিতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সামাদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন