সাইদুর রহমান, মাগুরা থেকে : মাগুরা জেলার হাটবাজারে চিনি ও রাসায়নিক মিশ্রিত খেজুর পাটালি দেদার বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল পাটালির কারণে খেজুর পাটালির স্বাদ ভুলতে বসেছে এলাকার লোকজন। বাজারে এক কেজি চিনির দাম ৪৫ টাকা সেখানে খেজুর পাটালির সঙ্গে ভেজাল দিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। বিরাট এ লাভের কারণে খেজুর পাটালির উৎপাদনকারীরা চিনি মিশ্রিত করে অধিক মুনাফা লুটছে। প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। খেজুর গুড় উৎপাদনকারীদের বলা হয় গাঁছি। শীতে নবান্নের আমেজ এখন গ্রাম থেকে শহর গঞ্জে বিরাজ করছে। চলছে খেজুর গুড় পাটালির পিঠাপুলির উৎসব। আর কেউ না জেনে আবার কেউ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর চিনি মিশ্রিত ভেজাল খেজুর গুড় পাটালি। এ ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নেয়া হয়নি কোনো আইনগত ব্যবস্থা। বাধাহীনভাবেই বিক্রি করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর উৎপাদনকারী। বাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, এক কেজি চিনি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পক্ষান্তরে এক কেজি খেজুর পাটালি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানে এক কেজিতে ৪৫ টাকা লাভ করছে উৎপাদনকারীরা। আর নলেন গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্রেতারা। এক শ্রেণীর গাছি ভেজালমুক্ত বলে প্রতি কেজি পাটালি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। তাতেও ভেজাল নেই এ কথা বলা যায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক উৎপাদনকারী (গাছি) বলেন, ভোরে গাছ থেকে রস নামিয়ে কড়াইয়ে জ্বাল দিলে যখন লাল বর্ণ ধারণ করে তখন চিনি ঢেলে দেওয়া হয়। এর পর সামান্য জ্বাল দিলে চিনি রসের সঙ্গে মিশে যায়। এর পর হাইড্রোস, ফিটকারি দিয়ে তৈরি করা হয় খেজুর গুড়ের পাটালি। এ গুড়ের রং উজ্জ্বল ও দেখতে সুন্দর হয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা বেশি। তিনি আরও জানান, একা নয় মাগুরা জেলার ৪ উপজেলার অধিকাংশ গাছি এ কাজ করছে। এ কারণে এলাকার হাটবাজারে আনা খেজুর পাটালির ৯৫ ভাগই চিনি মিশ্রিত। আরেক গাছি বলেন, স্বাভাবিকভাবে পাটালি তৈরি করলে চাহিদা কম এবং মূল্যও কম হওয়ায় চাহিদার স্বার্থে ভেজাল দিতে হচ্ছে। এক পাটালির আড়তদার জানান, কেবল মাগুরা নয়, ফরিদপুর, যশোরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অধিকাংশ পাটালি চিনি মিশ্রিত জেনেও ব্যবসার স্বার্থে কিছু করার থাকে না। কারণ চিনি মিশ্রিত পাটালির চাহিদা বেশি। মাগুরার জনৈক চিকিৎসক বলেন, খেজুরের রসে চিনি মিশিয়ে ভেজাল সারা দেশে হচ্ছে। ভেজাল পণ্যে শরীরের ক্ষতি হয় এটা স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক জানান, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জাল দিলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ গুড়ের তৈরি খাবার খেলে পেটেরপীড়া এমনকি লিভার ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি থাকে। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন