‘ইবনু তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়া, তা.বি.,খ. ২৮.২৪৭’ (খ) বেত্রাঘাত করা, (গ) বন্দী করা, (ঘ) নির্বাসন বা দেশ থেকে বহিষ্কার, (ঙ) শূলে চড়ানো, (চ) উপদেশ বা তিরষ্কার কিংবা ধমকদান, (ছ) অপমান করা, (জ) বয়কট, (ঝ) আদালতে তলব, (ঞ) চাকুরীচ্যুতকরণ, (ট) সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে রেদয়া, (ঠ) কাজ কারবারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, (ড) উপায় উপকরণ ও সম্পদ ন’ করা, (ঢ) সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং (ণ) আর্থিক দণ্ড আরোপ করা। ‘আল-কুরআন, ২ : ১৮৮’ আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পদ্ধতিতে ভক্ষণ করো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোন উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও।’৫৯
সুপারিশমালা ঃ বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে গোটা বিশ্বকে একটি Global Village মনে করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে অপেক্ষাকৃত কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলো অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর সংস্পর্শে এসে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ সৃস্টি হয়। IMF, World Bank, USA পলিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি অনেক NGO দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
দুর্নীতিদমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব-কর্তব্য, ভূমিকা ও আইনগত বাধ্যবাধকতা অনেক বেশি। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, ‘ঘুষ যদি টেবিলের উপরে উঠে যায় তা হলে আমার করণীয় কিছুই নেই, আর যদি নিচে থাকে তাহলে এক্ষুণি প্রতিরোধ করা সম্ভব’। বর্তমানে আমাদের জাতীয় জীবনে ঘুষ, দুর্নীতির অবস্থান কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। তাই দুর্নীতি দমনে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরা হলো: ১. দুর্নীতিমুক্ত পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃস্টির লক্ষ্যে ধর্মীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) ব্যাপক অনুশীলন হওয়া প্রয়োজন; ২. ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে দুর্নীতির ভয়াবহ পরিণতি ও কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা প্রয়োজন; ৩. রাস্ট্রীয় পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরির জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সম্পূরক অধ্যায় চালু করা যেতে পারে; ৪. সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার মানদণ্ড রক্ষা করা উচিত; এ বিষয়ে লিখিত অঙ্গিকারনামা ও মৌখিক শপথ নেয়া উচিত যে, তিনি কোন পর্যায়ে নিজেকে দুর্নীতির সাথে জড়াবেন না; ৫. রাজনৈতিক পক্ষপাত ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
৬. সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পদমর্যাদা ও দ্রব্যমূল্য সামনে রেখে সম্মানজনক জীবন-জীবিকার উপযোগী বেতনভাতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন;
উল্লেখ্য সুইডেন, আর্জেটিনা, পেরু, সিংগাপুরসহ বিভিন্ন দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা জীবন-জীবিকার উপযোগী বলে সেখানে দুর্নীতি অনেক কম; ৭. সকল ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন; ৮. সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ অডিট ব্যবস্থা, স্বচ্ছ মনিটরিং পদ্ধতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চতকরণ এবং সুস্প’ নীতিমালা প্রণয়ন ও তথ্য সংরক্ষণ; ৯. দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে এবং দুদককে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষমতা দিতে হবে; ১০. জনপ্রতিনিধিদের ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মানসিকতার উন্নতি করতে হবে, যাতে দুর্নীতির মত ঘৃণ্য কাজকে ঘৃণার চোখেই দেখে এবং দুর্নীতি থেকে বিরত থেকে নিজেদেরকে মডেল হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে; ১১. দুর্নীতিমুক্ত রাস্ট্র ও প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাইভেট চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণকে এ পরিকল্পনার অধীনে নিয়ে আসতে হবে এবং সকলকে আধ্যাত্নিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সততা ও নৈতিকতার আদর্শে উজ্জীবিত করতে হবে। ১২. দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রণীত কর্মসূচির সাথে আলেম-ওলামা, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং মসজিদের ইমাম ও খতবীগণকে সম্পৃক্ত করা এবং তাঁদের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করা; ১৩. দুর্নীতি প্রবণতার কারণসমূহ উদঘাটন করে সে আলোকে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ১৪. সংবাদপত্রের আদর্শিক স্বাধীনতা দিতে হবে; ১৫. প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; ১৬. ইসলামের শাস্তি বিধান (ইসলামী ফৌজদারী আইন) চালু করা; ১৭. কুরআনে বর্ণিত দুর্নীতি প্রতিরোধের আয়াতসমূহের ব্যাপক প্রচার করা; ১৯. দুর্নীতির ভয়াবহতা ও পরিণাম সম্বলিত হাদীসের ব্যাপক প্রচার করা; ২০. সর্বোপরি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় দুর্নীতি বিরোধী ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে আরো গণসচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি করতে হবে।
উপসংহার ঃ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে দুর্নীতির মত দু’ক্ষত সামাজিক ও জাতীয় জীবনের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ থেকে নিশ্কৃতি পাওয়ার জন্য সবাইকে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, ইসলামপ্রিয় বাংলাদেশী জনসাধারণ এর অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত দেখতে চায়। এ জন্য সমাজের তথা রাস্ট্রীয় দায়িত্বশীলতার যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। পরকালে এর ভয়াবহ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ছড়িয়ে পড়েছে তার করাল গ্রাস থেকে আমরা কেউই রেহাই পাব না। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা যায় কিন্তু শান্তি অর্জন করা যায় না। অপরাধ আর অশান্তি একটা আরেকটার সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত। যারা ন্যায়নীতি মেনে চলে তাদের অন্তরে শান্তি বিরাজমান থাকে। দুনিয়াতে অপরাধের শাস্তি হোক বা না হোক আখিরাতে সব অপরাধের বিচার হবে। তখন অন্যায়ভাবে উপার্জিত সম্পদ কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। তবে যারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে অন্তর পবিত্র করেছেন, অপরাধ ছেড়ে দিয়ে সৎভাবে জীবন যাপন করেছেন তারা আল্লাহর কঠিন আযাব থেকে যেমন রক্ষা পাবেন তদ্রুপ অভাবনীয় পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হবেন। দেশের প্রতিটি নাগরিককে এ পথে পুরোপুরি ফিরে আসতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন